আসামি ইশরাকসহ চার শতাধিক

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৪৬ জনকে। তাদের মধ্যে ২৮ জনকে গ্রেফতার করে রিমানেড নেয়া হয়েছে। আসামিদের বেশির ভাগ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। তবে এ ঘটনায় একটি কল রেকর্ড পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।

এদিকে, মতিঝিল থানায় করা মামলায় আসামিদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী ইশরাক হোসেন রয়েছেন। মামলার এজাহারে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছেন। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের ডিসি ওয়ালিদ হোসেন জানান, মতিঝিলে ২টি, শাহবাগে ২টি, পল্টনে ২টি এবং বংশাল, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, বিমানবন্দর, ভাটারায় ও কলাবাগানে একটি করে মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল দিনে এসব মামলা হয়।

পল্টন থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকি জানান, পল্টন থানায় দায়ের করা দু’টি মামলায় ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জনকে। বংশাল থানার ওসি মো. শাহীন ফকির জানান, বাসে আগুনের ঘটনায় একটি মামলায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫৬ জনকে। শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ জানান, দুই মামলায় ৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় বিভিন্ন থানায় করা মামলা মোট ১৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে শাহবাগ থানার দুই মামলায় ৬ জনের ৩ দিন করে, পল্টন থানার এক মামলায় ৭ জনের ৫ দিন করে, আরেক মামলায় ২ জনের ৩ দিন করে, এছাড়া মতিঝিল থানার এক মামলায় একজনের ৩ দিন ও অপর আরেক মামলায় আরেক জনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন মেয়াদে আসামিদের রিমান্ড আবেদন করেন। এরপর শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় হঠাৎ বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় একটি কল রেকর্ড পেয়েছি আমরা। সেটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। যারা কথা বলেছেন তাদের পরিচয় জানতে কাজ করা হচ্ছে। তবে এই কল রেকর্ড মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে। কল রেকর্ড আর আগুনের ঘটনার সঙ্গে কথোপকথনের মিল রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গত ১২ নভেম্বর রাজধানী বেশ কয়েকটি জায়গায় হঠাৎ বাসে আগুন দেয়ার ঘটনার সাথে ২০১৪-১৫ সালের ঘটনাগুলোর মিল রয়েছে। তবে কারা আগুন দিয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। ছয় বছর আগের ওই সময়ে আগুন দেয়ার ঘটনাগুলোতে মানুষ যেমন আতঙ্কগ্রস্ত ছিল একইভাবে হঠাৎ বাসে আগুনের ঘটনায় নগরবাসী আতঙ্কিত হয়েছে। এটি হওয়ারই কথা। পুলিশও হতবাক হয়েছে, হঠাৎ এতগুলো বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায়। আমরা কাজ করছি, যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে।

কারা আগুন দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নয়টি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ৬ থানায় ১৩টি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেহেতু আগুন দেয়ার সময় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, সেহেতু কারা আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করে জানা যাবে। তবে বিএনপি, ছাত্রদল বসুন্ধরা এলাকায় মিছিল করেছে, এসময় তারা গাড়ি ভাঙচুর করার সময় দু’জন আটক হয়েছে জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাব ও নয়াপল্টন এলাকাতেও মিছিল করেছে। এরপরই মূলত আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ, মতিঝিল, সচিবালয়, উত্তরা, পল্টন, নয়াবাজার, ভাটারা এলাকায় ১০টি বাসে আগুন দেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *