সেনাবাহিনীর সাথে ‘বন্ধুত্ব’থেকেই কি বন্দিত্ব?

অনলাইন ডেস্ক: প্রায় ৩০ বছর আগে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। দেশের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে তার আন্দোলন সম্পর্কে নরওয়ের নোবেল কমিটি বলেছিল – সাম্প্রতিক কয়েক দশকের মধ্যে এশিয়ায় অসামরিক সাহসিকতার অন্যতম অনন্যসাধারণ উদাহরণ। বায়োপিক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক নেতাদের প্রশস্তি। কী পাননি তিনি?নিজের নোবেল জয়ের এক বছর আগে নিজের দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) তৈরি করেন। বিপুল ভোটে নির্বাচনেও জেতেন। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ সেনা পূনরায় তাকে গৃহবন্দি করে। ১৯৯৫-এ স্বামী, ব্রিটিশ ঐতিহাসিক মাইকেল অ্যারিসের সাথে শেষ দেখা। তার চার বছর পর ক্যান্সারে মারা যান মাইকেল। দুই ছেলের সাথে দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ ছিল বহু বছর। প্রশ্ন তোলাই যায়, হারানোর তালিকাটাও কি নেহাত কম?

দীর্ঘ লড়াই শেষে ২০১৫ সালে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বেছে নেয়া নেত্রী দেশের অভ্যন্তরে প্রবল জনপ্রিয়। সেই অং সান সু কি-কে গত সোমবার অভ্যুত্থানের পর আট্ক করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এক বছরের জরুরি অবস্থাও জারি করেছে দেশে। তা হলে, হারানো-প্রাপ্তির দাঁড়িপাল্লায় কোন দিকটা ভারী হলো? বলা মুশকিল। তবে নোবেলজয়ী বিশ্বখ্যাত নেত্রী থেকে সামাজিক ভাবে কার্যত অচ্ছুৎ হয়ে পড়ার এই পথ যে অক্সফোর্ডের এই সাবেকেরই তৈরি করা, সে ব্যাপারে দ্বিমতের জায়গা কম।২০১৬-১৭ থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপরে ক্রমাগত ঘটে চলা নিপীড়ন, তাদের দেশছাড়া করার পরেও সু চি’র নীরবতা এবং সেনার বিরোধিতা করার বদলে তাদের সমর্থনে কথা বলা, সবকিছু তার ভাবমূর্তি বদলে দেয় সারা বিশ্বে। সেনাবাহিনীর সাথে অতিরিক্ত মিত্রতা যে তার পতন ডেকে আনতে বাধ্য, সে কথা নেত্রীর ঘনিষ্ঠদের অনেকে আগাম বুঝতেও পেরেছিলেন। তার সাবেক ডেপুটি তথা সহ-রাজনৈতিক বন্দি উইন টিন ২০১৩-য় ওয়াশিংটন পোস্টে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনীকে বড্ড বেশি জায়গা ছাড়ছেন সু কি। উনি মনে করছেন, সেনার সব নেতাকেই বন্ধু বানিয়ে নিজের দিকে নিতে পারবেন!’ সেই ‘বন্ধুত্ব’-এর প্রক্রিয়াই তার কাল ডেকে আনল বলে মনে করছেন অনেকে। সু চি-ই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যাকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। সেখানে রোহিঙ্গা শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি তিনি। বলেছিলেন, ‘বহিরাগত সন্ত্রাসবাদী।’তবে এতকিছুর পরেও দেশের ভিতরে তার জনপ্রিয়তা খুব একটা নড়চর হয়নি । গত নভেম্বরে পার্লামেন্টে ৪৭৬ আসনের মধ্যে ৩৯৬টিতে জয়ী হয় তার দল। গত সোমবার অধিবেশন বসার কথা থাকলেও তার আগেই অভ্যুত্থান, ইমার্জেন্সি এবং ধরপাকড় শুরু হয়। এবং সু চি যাদের সাথে ‘বন্ধুত্ব’ করতে গিয়েছিলেন, সেই সেনাবাহিনীর হাতেই বন্দি হলেন তিনি।নেত্রীর জন্ম ১৯৪৫ এর ১৯ জুন। তার বাবা অং সান ছিলেন মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা এবং ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করার লড়াইয়ে সামিল। মা কূটনীতিক। ১৯৪৭-এ হত্যা করা হয় অং সানকে। ছোট থেকে জীবনের অনেকটা সময়ই ভারত ও ইংল্যান্ডে কাটিয়েছেন তিনি। ১৯৮৮-তে ৪৩ বছর বয়সে অসুস্থ মায়ের দেখভালের জন্য ফেরেন মিয়ানমারে। সেই থেকেই শুরু রাজনৈতিক যাত্রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *