লাউয়াছড়ায় উদয়ন ট্রেন লাইনচ্যুত ১৫ ঘন্টা পর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন

এম. মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সীমানায় চট্টগ্রাম থেকে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস (৭২৩) ট্রেনের ৩টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ফলে সিলেট-চট্টগ্রাম এবং সিলেট-ঢাকার সঙ্গে ১৫ ঘন্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। দুটি রিলিপ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার কাজ শুরু করে সন্ধ্যায় রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। তবে এই ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় রেল বিভাগের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস এর পরিচালক ওমর ফারুক জানান, ২০ মে শনিবার ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে লাউয়াছড়া পাহাড়ী এলাকা অতিক্রমকালে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঝড়ের কবলে পরে। এ সময় চলন্ত ইঞ্জিনের সামনে একটি বিশাল আকৃতির গাছ লাইনের উপরে পড়ে গেলে ইঞ্জিনটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনাকবলিত উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক আবুল কাশেম বলেছেন, ‘লাউয়াছড়ার ভেতরের আঁকাবাঁকা রেললাইন দিয়ে ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ট্রেনের ২০ গজ সামনে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। আমি দ্রুত ইমার্জেন্সি ব্রেক চাপি।

পরে ট্রেন গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে থামে। ধীরে ধীরে ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। লাইনচ্যুত হওয়া বগিতে থাকা দীলিপ তালুকদার নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমি লাইনচ্যুত বগিতে ছিলাম। হঠাৎ ট্রেন থেমে যায়। আমি দেখতে পাই, ট্রেনটি ধীরে ধীরে এক পাশে হেলে যাচ্ছে। আমিসহ যাত্রীরা দ্রুত অন্য বগিতে ও দরজা দিয়ে নিচে নেমে যাই। ট্রেন হেলে পড়ার পর অনেকে ট্রেন থেকে নামেন। বড় ধরনের আঘাত কেউ পাননি। সামান্য ব্যথা পেয়েছেন কয়েকজন।
এদিকে খবর পেয়ে ভোর ৬ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছে রেল পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা। তারা যাত্রীদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে ষ্টেশনে পাঠিয়ে দেন। এই ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) সাব্বির বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা এখানে আসি। ফায়ার সার্ভিস, রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশ মিলে ট্রেনের যাত্রীদের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বের করে অন্য গাড়িতে তুলে দিই। সবার নিরাপদে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সকাল ১১ টায় দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের অক্ষত বগিগুলো উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে আনা হয়। রেলওয়ের উপ প্রকৌশলী (পথ) ফিরোজ গোলদার জানান ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিন ও দুটি বগি উদ্ধার করতে আখাউড়া থেকে রিলিফ ট্রেন এসেছে। দুপুর আড়াইটায় একটি বগি লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইঞ্জিনসহ বাকি বগি উদ্ধারের কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে লাইন স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী, সিলেট থেকে ঢাকা গামী জয়ন্তিকা ট্রেনের সিডিউল বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন। শমশেরনগরের সহকারী স্টেশনমাস্টার উত্তম দেব বলেন, লাইনচ্যুত হওয়ায় ৪ ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।

কুলাউড়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. রুমান আহমদ বলেন, ওই ৪ ট্রেনের টিকিট ফেরত দিয়ে তার টাকা নিতে যাত্রীদের জানানো হয়েছে। বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান জানান, কাজ করার মত পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায় উদ্ধারকাজ বিলম্ভিত হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় সন্ধ্যার মধ্যে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘ ১৫ ঘন্টা পর সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে শায়েস্তাগঞ্জ ছেড়ে আসলো ট্রেন।

এ ঘটনায় রেল বিভাগের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য কিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি উদ্ধারে সকাল সাড়ে ৯ টায় কুলাউড়া ও আখাউড়া ষ্টেশন থেকে থেকে ২টি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে।

আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেসের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল রানা বলেন, বনের ভেতর ঝড়ে একটি গাছটি রেললাইনের ওপর পড়ে ছিল। ট্রেনটি সেই গাছে ধাক্কা দিলে এর ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

কুলাউড়া রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আনিছুজ্জামান বলেন, আখাউড়া ও কুলাউড়া ষ্টেশন থেকে ২টি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছে।

এ ঘটনায় রেল বিভাগের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগের পরিবহস কর্মকর্তা খায়রুল কবিরকে আহবায়ক করে গঠিত এ কমিটিতে বিভাগীয় যান্ত্রীক প্রকৌশলী (লোক), বিভাগীয় যান্ত্রীক প্রকৌশলী (ক্যারেজ) ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (ঢাকা-২) ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (সংকেত ও টেলিযোগাযোগ) সদস্য করা হয়েছে। তারা শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *