রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহাল ও সার্বিক উন্নয়ন কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের গুণীজন সংবর্ধনা রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি 

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এ লক্ষে ২২ মে সোমবার বিকেলে অলিলা গ্রুপের সহায়তায় ও রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহাল ও সার্বিক উন্নয়ন কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের আয়োজনে রাজনগর সরকারি কলেজ মাঠে গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে রাজনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান খানের সভাপতিত্বে ও টেংরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু খাঁনের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ, পরিবেশকর্মী ও পিকেএসএফ (ঢাকা) এর সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, অতীতের স্বর্ণালী ইতিহাসের সেই রাজনগরকে আবারও ইতিহাসে দাঁড় করাতে হবে। সেই জন্য সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহাল ও সার্বিক উন্নয়ন সংসদকে আপনারা সাদরে গ্রহণ করুন। সকলে সম্মিলিতভাবে এ অঞ্চলের সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধারে সমবেত হবার এখন সময়ের দাবি। সংসদীয় আসন পুনর্বহাল দাবি অবশ্যই সঙ্গত। সম্মিলিতভাবে এই দাবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি আপনাদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি।

তিনি আরো বলেন, দু:খী মানুষের মুখে হাঁসি ফুটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু যেমনি ভাবে কাজ করে গেছেন ঠিক তেমনি তাঁরই দেখানো পথে তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদেরকেও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। দু:খী মানুষের মুখে হাঁসি ফুটানো হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ছিল সমাজতান্ত্রিক।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন মানুষ কেন্দ্রীক উন্নয়নের ধারক।  কিন্তু আমরা এখন উন্নয়ন থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়েছি। সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। কোন নেতা সমস্যার কথা (দুর্নীতি) নির্বাচনী ইশতেহারে বলেননি যেটা ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে। দুর্নীতিকে বাদ দিয়ে আমাদের কল্যাণমুখী চিন্তা করে দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে কি বিষয় সম্পৃক্ত থাকবে তা নিয়ে একটি বই আমি লিখেছি। আশা করি বইটি পড়লে সবাই ইশতেহার সম্পর্কে জানতে পারবেন। সকল সমস্যা নিরসন করে আমরা টেকসই উন্নয়নে কাজ করে যাবো৷ ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে কল্যাণ রাষ্ট্রে

পরিণত হতে পারবো। এরপর ২০৪১ সালে মধ্যম আয় থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।  উনার মাধ্যমে সোনার বাংলায় হাঁটার জন্য আমরা একটি পথ রচনা করে যাবো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু কর্ণারের প্রতিষ্ঠাতা এবং অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম, রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহাল ও সার্বিক উন্নয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের উপদেষ্টা ও অলিলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: ইকবাল, আওয়ামীলীগ নেতা ফয়ছল আহমদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, রাজনগর তথা এই সুবিশাল জনপদটি সুদূর অতীতকাল থেকেই অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমৃদ্ধিতে অন্য অনেক জনপদ থেকে অগ্রসর ছিলো। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কুটচাল এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এই রাজনগর তথা এ সংসদীয় আসনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে শোচনীয় পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে জনমানুষের জীবনমানকে এখন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর হিসেবে ধরা হয়। প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মতো জনদরদী নেতা থাকলে রাজনগরবাসী কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হতো না। এখান থেকে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে সংসদে কথা বলবে মানুষের উন্নয়নের জন্য। তাই উপজেলাবাসীর প্রয়োজনে রাজনগরে সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করা এখন সময়ের দাবি৷

রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহাল কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের উপদেষ্টা ও অলিলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, এই রাজনগর ছিল ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি ঐতিহ্যেবাহী উপজেলা। এখানে অনেক ইতিহাসবিদ, রাজনীতিবিদ ও কবিদের জন্ম হয়েছিল। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের রাজনগর নানান সময় নানাভাবে রাজনৈতিক কূটচালের শিকার হয়েছে। এরপরে ধারাবাহিকভাবে এই আসনে অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন, আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউই রাজনগরের মানুষের জীবনমানের কোনো পরিবর্তন করতে পারেন নি, বড় ধরণের কাঙ্ক্ষিত কোন উন্নয়ন করতে পারেননি।  বিগত দিনের সকল আশ্বাস রাজনগরবাসীর জন্য হতাশায় পরিণত হয়েছে, শোষিত হয়েছে। সরকারের কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে রাজনগর বাসি বঞ্চিত হচ্ছে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে।  কিন্তু আর নয়, এখন সময় এসেছে রাজনগরের সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধারের। আমি মনে করি রাজনগরের মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পেতে, রাজনগর-কমলগঞ্জবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে এই আসনটি আবারও ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। তা নাহলে এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনপদ আরও পিছিয়ে যাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে।

এছাড়া বক্তারা আরো বলেন- জাতীয় সংসদে মৌলভীবাজার মহকুমায় আসন সংখ্যা ছিল ৫টি। এর মধ্যে রাজনগর উপজেলার (তৎকালীন থানা) প্রশাসনিক কাঠামোকে কেন্দ্র করে “২৩৩ সিলেট –১৪” নামে একটি নির্বাচনী আসন ছিল। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে উল্লেখিত আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মরহুম তোয়াবুর রহিমের পক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। রাজনগরের টেংরা বাজারে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনী জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি আজও এলাকার প্রবীণদের হৃদয়ে কিংবদন্তির কবিতা হয়ে আছে। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর নেমে আসে দুর্দিন। একের পর একেক সামরিক শাসকের শাসনে অতিষ্ট হয়ে পড়ে মানুষ। এরপর থেকে মৌলভীবাজারের এই আসনটিতেও নেমে আসে কালোছায়া। ধীরে ধীরে জাতীয় রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে থাকে এই অঞ্চলের মানুষের ভোটাধিকারের প্রভাব। ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনেও এসেছে অবর্ণনীয় পরিবর্তন। ইতিহাসের এক সময়ের রাজা বাদশাদের ভূমিখ্যাত রাজনগর এখন দেশের পিছিয়ে পড়া জনপদের একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই দুরবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠার একমাত্র পথ রাজনগর সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধার করা। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে পিছিয়ে পড়া জনপদে রূপ নেয়া রাজনগরের আসনটিতে যোগ্য নেতৃত্ব বসিয়ে হারানো জৌলুশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য রাজনগর সংসদীয় আসন পুনর্বহাল ও সার্বিক উন্নয়ন পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। এখন সময় হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষকে একসাথে নিয়ে কাজ করার। রাজনগরের হারানো অর্থনীতি, সামাজিক স্থিতিশীলতা রাজনগরবাসীকে রাজনগর সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আমরা রাজনগরবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে  দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনীত অনুরোধ করছি, রাজনগরের উন্নয়নের স্বার্থে এই উপজেলায় সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করতে যেন সরকারের পক্ষ থেকে অতি দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয়।  এছাড়া  রাজনগর উপজেলায় একটি পৌরসভা তৈরি ও গ্যাস লাইন সংযোগের দাবি জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজনগর সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রজত কান্তি গোস্বামী, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তি চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য  জিয়াউর রহমান,

কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, মুন্সী বাজার ইউপি চেয়ারম্যান রাহেল আহমদ  ও গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতে একটি মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।

প্রসঙ্গত, সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করে ১৯৭৭ সালের ৩০ শে মে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রপতি থেকেই নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মানসে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করেন। তাঁর পূর্বেই নির্বাচন ও সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে সরকারের হাতে থাকা গোয়েন্দা রিপোর্টের তথ্য ছিল যে, সিলেট বিভাগ আওয়ামীলীগের ঘাটি।

বৃহত্তর সিলেটের সংসদীয় আসন গুলোকে খন্ডে-খন্ডে বিভক্ত না করলে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনায় বিশ্বাসী প্রার্থীগণের জয় ঠেকানো কঠিন হবে। তাই  জিয়া কৌশল নিলেন।  “দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স-১৯৭৬” কাজে লাগিয়ে তৎকালীন মৌলভীবাজার মহুকুমার নির্ধারিত ৫ টি সংসদীয় আসনের একটি আসন ২৩৩ সিলেট-১৪, যা রাজনগর থানা ও কমলগঞ্জ থানার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে ছিল সেই সংসদীয় আসন কেটে উত্তরবঙ্গের অন্য একটি জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে দেন। যা ছিল উল্লেখিত অযৌক্তিক ও অবৈধ সিদ্ধান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *