বিশেষ প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলায় অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া দিনমজুর আতিক মিয়ার অসহায় সন্তানরা পাচ্ছে এবার সরকারী ঘর। এছাড়া আরো অনেকে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আতিক মিয়ার অসহায় পরিবারের উপর একটি মানবিক প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। শনিবার সকালে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি’র নজরে আসে মানবিক এই প্রতিবেদনটি। তিনি বিষয়টি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সাথে যোগাযোগ করে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী সদ্যপ্রয়াত আতিক মিয়ার বাড়িতে যান। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কালের কণ্ঠের কুলাউড়া প্রতিনিধি মাহফুজ শাকিলের সাথে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরমধ্যে হামদর্দ ল্যাবরেটরী ঢাকার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া রাসেল বিকাশের মাধ্যমে ১১ হাজার টাকা, ময়মনসিংহ থেকে মাহিন আহমদ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম থেকে দুলাল আহমদ ২ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেন। এছাড়া স্থানীয় সাপ্তাহিক সীমান্তের ডাকের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে ৪ বান্ডিল ঢেউটিন প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আতিক মিয়া (৫৪) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় গত ২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোরে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। মৃত্যুর সময় আতিক মিয়া স্ত্রী রফনা বেগমসহ তিন সন্তান আয়েশা বেগম (৮) তানজিনা বেগম (৪) ও রাফি মিয়া (২) রেখে যান। সরেজমিন ওই বাড়িতে গেলে আতিক মিয়ার চার বছরের শিশুকন্যা তানজিনাকে বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করলে সে বলে ওঠে, ‘আব্বা আল্লাহর বাড়ি গেছোইন, আমরার লাগি পোলাও লইয়া আইবা।’ বাবা হারানো তানজিনার দৃষ্টিতে এখন শুধুই অজানা এক বিস্ময়ের ছাপ। এদিক সেদিক তাকিয়ে যেনো বাবার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। সে হয়তো বুঝতেই পারেনি তার বাবা এখন না ফেরার দেশে চিরঘুমে রয়েছেন। বাবার কথা চিন্তা করে বার বার মুর্চা যাচ্ছে চার বছরের ছোট্ট এই শিশুটি।
বাবাকে হারিয়ে ওই তিন শিশু এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের কান্না যেন আর থামছে না। বাবাকে হারিয়ে তারা বিলাপ করছে, অবুঝ এই শিশুদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। এই শিশুরা এখন কীভাবে কোথায় থাকবে, তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে এ নিয়ে এখন তাদের স্বজন-প্রতিবেশীরা চিন্তিত। শিশু তিনটির কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে তাঁদেরও। ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, তাদের মাটির ঘরের জীর্ণ দেয়াল ধসে যাওয়ার উপক্রম এবং টিনের চালাও নষ্ট হয়ে গেছে দীর্ঘদিন থেকে। বিশাল ছিদ্র হয়ে গেছে টিনের চালায়। ঘরে নেই কোন বিছানা, তাই মাটির মেঝেতে সন্তানদের নিয়ে শীতের এই প্রকটের সময় রাত্রীযাপন করছেন রফনা বেগম। স্বামী আতিক মিয়ার রেখে যাওয়া জীর্ণঘরসহ ছোট্ট একটি ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই। স্বামী মারা যাওয়ার দিন ঘরে কোন খাবার ছিলোনা। গ্রামের মানুষের দেওয়া সহযোগিতায় সন্তানদের আহার জুটে।
আতিক মিয়ার স্ত্রী রফনা বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর হিসেবে রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনমতে সংসার চালাতেন। কিন্তুু মহামারি করোনার থাবায় কোন কাজ না থাকায় বেকার হয়ে যান তিনি। গত একমাস ধরে হৃদরোগে (হার্টের ছিদ্র) আক্রান্ত হয়ে টাকার অভাবে সুচিকিৎসাও করতে না পারায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে আমাদের পরিবার দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে কোনমতে চলছিলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চোধুরী বলেন, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্যারের নির্দেশনায় সরেজমিন ওই পরিবারের খোঁজ খবর নেই। ওই পরিবারকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এছাড়া যারা ওই পরিবারটিকে সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন তাদের সাথে সমন্বয় করবে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি খুবই মর্মস্পর্শী। শনিবার সকালে মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ মহোদয় টেলিফোনে ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। আমরা তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।
