কুলাউড়ায় প্রেম করে বিয়ে- যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করলো পাষন্ড স্বামী; ছয় মাস পর সেই ঘাতক স্বামী আটক

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চাঞ্চল্যেকর গৃহবধু মুন্নী আক্তার হত্যার অভিযোগে পলাতক থাকা তাঁর স্বামী নাঈম মিয়াকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিজের স্ত্রীকে হত্যা করার পর বিবস্ত্র দেহ ঘরের মেঝোতে ফেলে পালিয়ে যান ঘাতক স্বামী নাঈম মিয়া। প্রায় ছ’মাস পালিয়ে বেড়ালেও শেষ অবধি রক্ষা হয়নি তার। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার গাজীপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে কুলাউড়া থানা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার শাহাজামাল মিয়ার ছেলে নাঈম মিয়া (২৪) ইকোফুড নামক কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কুলাউড়া পৌরসভাধীন শিবির এলাকায় বসবাস করতেন। সেই সুবাদে এক বছর পূর্বে পরিচয় হয় পাশ্ববর্তী কুলাউড়া গ্রামের মুন্নী আক্তারের সাথে। পরিচয় থেকে সেটি প্রেম-ভালবাসায় গড়ায়। এরপর চলতি বছরের মে মাসে পরিবারের সম্মতিতেই মুন্নীকে বিয়ে করে নাঈম। বিয়ের দু’মাস পার হতে না হতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে যৌতুক নিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। গত ৮ জুলাই রাতে যৌতুকের বিষয় দু’জনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হলে নাঈম নিজের স্ত্রী মুন্নীকে এলোপাতাড়ীভাবে মারধর করে। তীব্র আঘাতে মুন্নীর বাম কান দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এরপর নিজের স্ত্রীর মরদেহ গুম রাখার উদ্দেশ্যে তার মৃতদেহ বিবস্ত্র করে বসত ঘরের খাটের উপর রেখে বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতক নাঈম।
পুলিশ আরো জানায়, ঘটনার পর থেকে মুন্নী হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন এবং তার স্বামী নাঈম মিয়াকে আটক করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। সর্বশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওসার দস্তগীর এবং অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষন রায় এর দূরদর্শিতায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পলাতক আসামী নাইমের অবস্থান খোঁজে বের করা হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর রাতে ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম এবং মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহিম জিবান ঢাকার গাজীপুর জেলায় সাঁড়াশি অভিযানে চালান। টানা ৩ দিন অভিযানের পর ২১ ডিসেম্বর গাজীপুরের বাসন থানার বউ বাজার এলাকা থেকে স্ত্রী হত্যার প্রধান আসামী নাঈম মিয়াকে গ্রেফতার করে কুলাউড়া থানায় নিয়ে আসা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুর রহিম জিবান বলেন, টানা তিন দিনের অভিযানে ঘাতক নাঈমকে গ্রেফতার করা হয়। আসামী নাঈমকে আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে সে তার স্ত্রীকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিনয় ভূষন রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্ত্রী হত্যার প্রধান আসামী নাঈম মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। চাঞ্চল্যকর গৃহবধু হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামীকে গ্রেফতার করায় নিহত মুন্নীর পরিবারের লোকজন সন্তুষ্ট হয়ে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মুন্নীর পরিবারের লোকজনদের সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *