বিশেষ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ত্রিমুখী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার প্রায় ঘন্টা খানেক ভোট বন্ধ থাকে। এছাড়া কোন বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এবার ভোটে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো।
সরেজমিন শনিবার বেলা পৌনে দুটায় কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দল ছাত্রলীগের কুলাউড়া উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেল উক্ত কেন্দ্রে প্রবেশ করলে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুছ এবং ধানের শীষের প্রার্থী কামাল আহমদ জুনেদের কর্মী সমর্থকরা বিদ্যালয়ের গেইটের বাইরে ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেলকে কেন্দ্রের বাইরে বের করে দেয়ার জন্য উত্তেজিত হয়ে মিছিল দিতে থাকে। এক পর্যায়ে গেইটে লাথি দিয়ে দুই মেয়র প্রার্থীর শতাধিক নেতাকর্মী কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে। এসময় ধানের শীষের প্রার্থী কামাল আহমদ জুনেদ ও ইমরান নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। বাইরের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে পুলিশ কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেলকে কেন্দ্রের দায়িত্বরত ম্যাজিষ্ট্রেট রুহুল আমিনের নির্দেশে আটক করে। প্রায় ১৫ মিনিট পর কেন্দ্রে প্রবেশ করেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (ডিএসবি) হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার। তিনি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেলকে এই কেন্দ্রে প্রবেশ করার কারণ জানতে চাইলে রুমেল ভোট দিতে এসেছে বলে তার ভোটার স্লিপ দেখালে তিনি তাকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ইমন আহমদ রইছ ও সাইফুর রশীদ সুমনের এজেন্টের মধ্যে ও পরে তাদের দু’জনের মধ্যে বাকবিতন্ডা থেকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর ২নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হনুফা আক্তার ও রেহানা পারভীন এর এজেন্টের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে ধস্তাধস্তিতে রূপ নেয়। এসময় কেন্দ্রের বাইরে তিন মেয়র প্রার্থীর ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মল্লিকা দে, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওসার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ বিনয় ভুষন রায় কেন্দ্রে পৌছে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন জুনেদ আহত হয়ে কেন্দ্রের ভেতরে বিদ্যালয়ের বারান্দায় প্রায় ঘন্টা খানেক সময় অসুস্থ হয়ে অবস্থান করেন। খবর পেয়ে সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (কাজী জাফর) নওয়াব আলী আব্বাছ খান ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা কেন্দ্রের সামনে এসে উপস্থিত হন। এসময় ধানের শীষের সমর্থকরা কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সম্মুখে রাস্তায় অবস্থান করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এসময় অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা অভিযোগ করেন, পুলিশের লাঠিচার্জ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপি মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন আহমদ মাটিতে লুটে পড়েন। এসময় তিনি মাথায় ও বুকে প্রচন্ড আঘাত পান। আহতাবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠানো হয়েছে।
এদিকে কুলাউড়া পৌরসভার ৯টি ভোট কেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিলো লক্ষনীয়। কুলাউড়া নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, ইয়াকুব তাজুল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বন্যা শিবিরস্থ পৌর বালিকা বিদ্যালয়, আমির ছলফু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ভোটার উপস্থিতি ছিলো সবচেয়ে বেশি।
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মহিউদ্দিন আহমদ ভূঁইয়া জানান, ঘন্টাখানেক ভোট বন্ধ থাকলেও ফের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই অধিকাংশ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, বিশৃঙ্খলার জন্য কিছুটা সময় ভোট গ্রহন বন্ধ থাকলেও আমরা কেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে পুণরায় ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করি।
সহকারী রিটানির্ং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আহসান ইকবাল জানান, কুলাউড়া পৌরসভায় মোট ভোটার ২০ হাজার ৭৫৯। নির্বাচনে ৪ মেয়র, ৩৩ জন কাউন্সিলার ও ১৬ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলার প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিদ্বতা করেন। ৯টি ভোট কেন্দ্রে ৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।