আমাদের রাজনৈতিক সফলতা পেতে হলে শহীদ জিয়া প্রদর্শিত পথেই হাটতে হবে

শরীফুজ্জামান চৌধুরী (তপন) : “শহীদ জিয়াউর রহমান এর ৮৫তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি “শহীদ জিয়া বলেছিলেন আমি রাজনীতিকে কঠিন করে দেবো তাঁর সেই বক্তব্য নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছিলেন সেদিন কিন্তু তিনি যা বলেছিলেন সেটা ছিল শহরে বসে যে রাজনীতি সেটা কে তিনি খালে বিলে গ্রামে জনগণের জীর্ণ কুটিরে পৌঁছে দিয়েছিলেন , আমাদের অতীত যে পঞ্চায়েতি সিস্টেম সেটিকেই তিনি গ্রাম সরকার এর আদলে আধুনিক যোগপোযোগী করেছিলেন গ্রাম পুলিশ, পল্লী চিকিৎসক, পল্লী বিদ্যুৎ, পরিবার পরিকল্পনা, খাল খনন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তা অর্জন, তৎকালীন ৭কোটি মানুষের ১৪কোটি হাত কে তিনি তাঁর সেই উন্নয়নের কাজে লাগাতে পেরেছিলেন, তার সেই নীরব বিপ্লবের নাম ছিল সবুজ বিপ্লব, সেই সময় টিভিতে একটি গান বাজতো বিপ্লব চারিদিকে বিপ্লব, সেই বিপ্লব ই ছিল শহীদ জিয়ার রাজনীতি, যেখানে তাঁর পায়ের স্পর্শ লেগেছে সেখানেই তিনি কিছু না কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ই বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর বিদেশে চাল রপ্তানি করেছিলেন, বিপ্লব চারিদিকে শুধু গ্রামের উন্নয়ন নয় তিনি শহরে গার্মেন্টস শিল্পের যাত্রা শুরু করেছিলেন সেই গার্মেন্টস শিল্প আজ কোন স্তরে তা তো সবাই জানেন ,মিল শিল্প কারখানা র জন্য অকাতরে কাজ করে গিয়েছেন যেখানে যুদ্ধবিধ্স্ত যে দেশের জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারের কাছে প্রচুর সাহায্য সামগ্রী আসে তা দিয়ে সেই সরকার যা করতে পারেন নি শহীদ জিয়াউর রহমান খালি হাতে কাজ করার স্প্রিয়া নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া কল কারখানা খোলে দিয়ে ছিলেন এবং সত্যিকার অর্থেই শিল্প বিপ্লবের দ্বার তিনিই উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, শহুরে অবকাঠামোর উন্নয়নে নিরলস কাজ করে গেছেন ,শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশু পার্ক করেছেন, শিশু একাডেমি প্রতিষ্টা করেছেন সর্বপ্রথম ফ্লাড লাইটের আলোয় খেলা দেখা, রঙিন টেলিভিশন, তিনি ই মনে হয় সর্বপ্রথম এশিয়ায় টেলেন্ট হান্টিং এর জন্য বিটিভিতে নতুন কুড়ি চালু করে ছিলেন যার জন্য আজকের অনেক রথী মহারথী শিল্পীরা আজকের পর্যায়ে আসতে পেরেছেন , মত প্রকাশের জন্য সংবাদ মাধ্যম এর বদ্ধ দ্বার ও তিনি ই উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন আজকের যে প্রেসক্লাব যেখানে এখন বাকশালের পূজা অর্চনা হয় সেই প্রেসক্লাবের জমিটিও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দান করেছিলেন ,শত শত সংবাদ কর্মী সেদিন নিজ পেশায় ফিরে এসেছিলেন কারণ সমস্ত সংবাদপত্র বাকশালের জন্মদাতারা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, এই যে মিডিয়ার ক্ষেত্রেও মতপ্রকাশের বিপ্লবটিও তিনিই করে গিয়েছিলেন। সৌদি আরবের হেরেম শরীফে অবরুদ্ধ করে সন্ত্রাসীরা শহীদ জিয়ার পরামর্শে সৌদি সরকার সেই দফা বিনা রক্তপাতে সেই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে এবং হেরেম শরীফ মুক্ত হয়, সৌদি বাদশা শহীদ জিয়াকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন শহীদ জিয়া বলেছিলেন আমার অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রয়োজন নাই আমার দেশের শ্রমিকদের শুধু আপনার দেশে কাজ করার অনুমতি দেন সেই থেকে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজার এ আমাদের উত্থান, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এ আজকেও যেটা প্রাণ সঞ্চার করে চলেছে সেটা এই ফরেন কারেন্সি, যার বিপ্লবটাও শহীদ জিয়াউর রহমানই করে গিয়েছেন, এবার আসি দল দলীয় রাজনীতিতে তিনি বলেছিলেন “প্রশিক্ষিত কর্মীরাই হলো রাজনৈতিক দলের প্রাণ” দলীয় কাজে তিনি বিশৃঙ্খলা পছন্দ করতেন না, দুর্নীতি স্বজন প্রীতি তার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেনি, অনেক বাঘা বাঘা মন্ত্রীর এমন ও কাহিনী রয়েছে ট্রেনে জার্নি শুরু করেছেন মন্ত্রী হিসেবে গন্তব্যে পৌঁছে শুনেন মন্ত্রিত্ব নেই, এই ছিলেন শহীদ জিয়া, নিজে প্রাপ্য সরকারি সুযোগ সুবিধাটাও টিক মতো নিতেন না, হুমায়ুন আহমেদের দেয়াল যেটা সর্বশেষ লেখা উপন্যাস সেটা তে এক জায়গায় উল্লেখ আছে যে একদিন একজন অতীতে এসেছেন সকালবেলা প্রেসিডেন্ট সাহেবের বাসায় নাশতা করার জন্য তো সেই অতিথি নাশতার টেবিলে দেখলেন কয়েকটি লাল আঠার রুটি, সামান্য ভাজি, দুটি ডিমের ওমলেট, আর লাল চা, জিজ্ঞেস করলেন এই কি একজন প্রেসিডেন্ট এর নাশতার আয়োজন জবাবে স্মিত হেসে শহীদ জিয়া জবাব দিলেন একটি গরিব দেশের প্রেসিডেন্ট এর জন্য কি এটা যথেষ্ট নয়, অত্যন্ত পরিমিত আহারী প্রেসিডেন্ট জিয়া যেকোন জেলা উপজেলায় সফরে গেলে সার্কিট হাউজে যে খাবার খেতেন তার ও একটা চার্ট মোটামোটি সবাই জানতেন ভাজি ডাল ছোট মাছ এবং সেই খাবারের বিল ও তিনি প্রেসিডেন্ট এর সরকারি বেতন ভাতা থেকে পরিশোধ করতেন, রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের তাঁর এই জীবনাচার থেকে সততার পাঠ নেয়া প্রয়োজন, শহীদ জিয়ার কাছে ব্যক্তি দল এসবের চেয়ে দেশ প্রাধান্য পেয়েছে তিনি তার এই বিপ্লবের স্বপ্নে অনেক নন পলিটিক্যাল মানুষ কেও কাজে লাগিয়েছেন যেমন শহীদ জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন প্রফেসর শামসুল হক যিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, এরকমই শহীদ জিয়া দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভিন্নমতের মানুষের ও উপদেশ শুনতেন, অনেক অতি বিপ্লবীরা মাঝে মাঝে শহীদ জিয়াকে কর্নেল তাহের এর ফাঁসির দায় ভার চাপিয়ে দেন কিন্তু সেদিন আর্মির সিস্টেম এর বা তাঁদের শৃঙ্খলার বাহিরে গিয়ে কর্নেল তাহের কে মুক্ত করে দেয়া সম্ভব ছিলোনা সম্ভব হলে আরো ও রক্তপাত হতো, শুধু একটা বিষয় খেয়াল করবেন কর্নেল তাহের এর ফাঁসির পর তাঁর স্ত্রীকে চাকরি ও বাসস্থান ভাইদেরকে ও চাকরির ব্যবস্থা কেন শহীদ জিয়া করে দিয়েছিলেন? শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক বিশ্বাস সততা নেতৃত্ব বাছাইয়ের কলাকৌশল, কর্মী তৈরির যে সব শিক্ষনীয় পদ্ধতি ছিল তার থেকে আমরা যত দূরে সরে গিয়েছি ততোই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাই সর্বাগ্রে আমাদের প্রয়োজন শহীদ জিয়ার সততা নির্লোভ ব্যক্তিত্বের চর্চা করা এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে তাঁর প্রতিফলন ঘটানো, তবেই বাকশালের দ্বিতীয় দফা উত্থান কে আখেরি সমাধানে আমরা পৌঁছাতে পারবো।;মহান আল্লাহ শহীদ জিয়াকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন, আমিন

শরীফুজ্জামান চৌধুরী (তপন), সাবেক সাধারন সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদল ও সাবেক প্রথম যুগ্ম সম্পাদক যুক্তরাজ্য বিএনপি

ফেসবুক থেকে সংগৃহিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *