বিশেষ প্রতিনিধিঃ তান্ত্রিক একটি তাবিজ স্পর্শ করার সাথে সাথে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া আতিকুর রহমান সোহেল নামে এক শিক্ষক মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এসময় বিদ্যালয়ে দেখা দেয় চরম হট্টগোল ও উত্তেজনা। সেই সাথে স্থগিত হয়ে যায় নিয়োগ পরীক্ষা। অজ্ঞান হওয়া শিক্ষককে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এমন ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৩ জানুয়ারি শনিবার ছিল উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা। প্রধান শিক্ষক পদে ৫ জন প্রার্থী এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার, জেলা শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি ও মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু, সদস্য আব্দুল মন্নান ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাসান খান। মূল বিপত্তি ঘটে নিয়োগ পরীক্ষার পূর্ব মুহুর্তে। লিখিত পরীক্ষার জন্য হলরুমে প্রবেশের মুহুর্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী আতিকুর রহমান সোহেল বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী স্থানীয় শ্রীপুর লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিপুল বিশ^াস (৪৮) কে কুশল জিজ্ঞেস করলে বিপুল বিশ^াস আর্শীবাদ দেয়ার কথা বলে একটি তাবিজ শিক্ষক সোহেলের শরীরে স্পর্শ করান। এরপর শিক্ষক সোহেলের শরীরের কাঁপুনি শুরু হয় এবং তান্ত্রিক বিপুল বিশ্বাস সাথে সাথে প্রসাব করে দেন। সাথে সাথে শিক্ষক সোহেল অজ্ঞান হয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দায় লুঠে পড়ে যান। বেঁধে যায় হুলুস্থুল কান্ড।
এসময় বিদ্যালয়ের আশপাশের লোকজন এসে জড়ো হয়ে হট্টগোল শুরু করে নৈশপ্রহরী তান্ত্রিক বিপুল বিশ্বাসকে গণধোলাই দেন। বিক্ষুব্ধ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে নৈশপ্রহরি বিপুল বিশ্বাসকে বাথরুমে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে কুলাউড়া কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ বিনয় ভূষন রায়সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল বিশ^াসকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা শিক্ষক সোহেলকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাজারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এবং পরবর্তীতে তাকে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন বলে তাঁর ভাই শিক্ষক ফয়জুর রহমান ছুরুক নিশ্চিত করেছেন।
আটক বিপুল বিশ্বাস জানান, সোহেল স্যার আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। তিনি আমার কাছে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আশীর্বাদ চেয়েছিলেন। আমি তাকে ধর্ম ও মা-প্রভূর দোহাই দিয়ে তাবিজ দিয়ে আশীর্বাদ করতে উনার শরীরে স্পর্শ করি। তখন দেখতে পাই, তিনি অসুস্থতা বোধ করছেন। আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্যে কিছু করিনি। তাবিজ কোথায় থেকে পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ধর্মীয় গুরু কুলাউড়ার কাদিপুর কাকিচারের মহেশ বিশ্বাসের কাছ থেকে কয়েকমাস আগে তাবিজ সংগ্রহ করেছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু জানান, আমার সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। প্রধান শিক্ষক পদে পরীক্ষা অংশ নেয়া শিক্ষক সোহেল আমাকে এসে মাথা গুরানোর কথা বলেই মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তখন তাকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পাঠাই এবং নিয়োগ পরীক্ষা তাৎক্ষণিক স্থগিত করি।
কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার জানান, বিদ্যালয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় আপাতত শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনর্চাজ বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় মুঠোফোনে বলেন, আটক বিপুল বিশ্বাসকে জেলহাজতে রাখা হয়েছে। আর যার কাছ থেকে বিপুল বিশ্বাস তাবিজ এনেছিল সেই মহেশ চাষাকে আটকে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।