স্বীকৃতি বাতিলের শঙ্কায় জুড়ীর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সেজে প্রতারণার অভিযোগ

কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার নামের সাথে মিল থাকায় কমলগঞ্জের আজিরুন বেগম নামের এক মহিলা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী দাবী করে ভাতাভুক্তির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজিরুন বেগমের স্বামীর ১০৬১ নম্বর গেজেটের ওপর জামুকার তদন্ত আসলে স্বীকৃতি বাতিলের শঙ্কায় কমলগঞ্জ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জুড়ীর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার স্ত্রী সেজে নানা প্রতারণার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন কমলগঞ্জের আজিরুন বেগম। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধার ২৭৮২০ নম্বরটি আজিরুন বেগম তাঁর স্বামীর বলে দাবী করেন। এ কারণে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার ছেলে স্থানীয় ফুলতলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুব আলম রওশন গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর জাল সনদ তৈরীর চেষ্টার কারণে আজিরুন বেগমের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বিরইনতলা গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়া ১৯৮০ সালের ২ সেপ্টেম্বর মারা যান। ২০১৪ সালে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার স্ত্রী জুবেদা খাতুন জমিলা অবগত হন কেবল ভারতীয় তালিকা এবং লাল মুক্তিবার্তায় যাদের নাম রয়েছে তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। তখন তিনি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা অর্ন্তভুক্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। দীর্ঘ ৪ বছর যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৮ সালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করলে তিনি ভাতাভোগী হন।
অতঃপর জুবেদা খাতুন মৃত্যুবরণ করলে মায়ের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে যথাযথ নিয়মে তাঁর ছেলে ফুলতলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুব আলম রওশন ভাতা ভোগ করছেন। পক্ষান্তরে আজিরুন বেগম ২০০৫ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন। তাঁর স্বামীর বেসামরিক গেজেট নম্বর ১০৬১ এবং মুক্তিযোদ্ধা নম্বর ০১৫৮০০০১১১৭। আর মাহবুব আলম রওশনের বাবার ভারতীয় তালিকা নম্বর ২৭৮২০ এবং মুক্তিযোদ্ধা নম্বর ১৫৮০০০০২৭৯ এর সাথে আজিরুন বেগমের স্বামীর বেসামরিক গেজেট নম্বর ও মুক্তিযোদ্ধা নম্বরের কোনো মিল নেই। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজিরুন বেগমের স্বামীর বেসামরিক গেজেট ১০৬১ নম্বরের ওপর তদন্ত ও অনলাইন না হওয়ার কারনে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের শঙ্কায় জুড়ীর ভারতীয় তালিকা ভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার স্ত্রী সেজে নানা প্রতারনার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
সম্প্রতি সরকারি সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তদের স্ব স্ব জেলা-উপজেলায় যাচাই বাছাই শুরু হলে বিপাকে পড়েন আজিরুন বেগম। তখন তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে যোগাযোগ করে ভারতীয় তালিকায় নাম থাকা জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউপির মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার ভারতীয় তালিকার ২২৩ পৃষ্টায় থাকা ২৭৮২০ নম্বরটি তাঁর স্বামীর নম্বর বলে দাবী করেন।
জুড়ীর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সফিক মিয়ার ছেলে মাহবুব আলম রওশন বলেন, ওই মহিলাতো ২০০৫ সাল থেকে কমলগঞ্জ থেকে ভাতা পাচ্ছেন। যথানিয়মে তালিকায় অর্ন্তভুক্ত ও ভাতাভুক্ত না হওয়ায় সম্প্রতি জামুকার তদন্তে তার ভাতা বাতিলের আশঙ্কায় রয়েছে। কোন উপায় না দেখে আমার পিতার নামের সাথে তাঁর স্বামীর নামের মিল থাকায় এখন তিনি আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা নম্বর নিজের স্বামীর দাবী করে জাল কাগজপত্র তৈরীর মাধ্যমে ভাতা পুনর্বহালের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে কমলগঞ্জের কালেঙ্গা গ্রামের আজিরুন বেগমের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তাঁর ছেলে পরিচয়ে কামাল মিয়া বুধবার ২ টা ৩৬ মিনিটে বলেন, আমরা ২০০৫ সাল থেকে ১০৬১ নং গেজেট দিয়ে আমার পিতার ভাতা ভোগ করছি। আমরা এমআইএস করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *