এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নামে ফারুক একাই হাতিয়ে নিয়েছে ১০ কোটি টাকা

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, গত রোববার রাত ১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। গত জানুয়ারি মাসে মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। মাইকিং এর পরপরই ভুক্তভোগী গ্রাহকসমূহ প্রতারক ফারুকের প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ এর বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়ে। পরে গত ২৩শে জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ সহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে ফারুকসহ তার অন্যান্য সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর এক ভুক্তভোগী বিষয়টি নিয়ে মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করে।

তিনি আরও জানান, ওমর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলার কবিরহাটের সাগরপুর এলাকায়। সে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে ২০১৪ সালে ঢাকায় চলে এসে মগবাজার এলাকায় একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করে। অতঃপর ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যবসা শুরু করে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫টির অধিক অ্যাকাউন্ট খোলে। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। ওমর ফারুক তার এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতো।

তিনি আরও জানান, গত ২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ করে জমা না দিয়ে বিলের টাকা আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ ছাড়াও সে এমএলএম ব্যবসা ‘অটুট বন্ধন’ নামে একটি এমএলএম সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ জনগণকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের নিকট হতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিকাশ, নগদ এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এর অনুরূপ বিল পরিশোধের জন্য ‘নব ক্যাশ’ নামক একটি সেবা চালু করে সাধারণ মানুষের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। সে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন ছিল কিনা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সঠিক কাগজপত্র দিয়েই ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স এর এজেন্ট খোলা হয়েছে হয়েছিল। কিন্তু, ফারুক ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতো। পরে ওই টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে সে নিজেই টাকা রেখো দিতো। এ ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে তিতাস গ্যাসের কোনো গ্রাহক জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ জড়িত হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ফারুক মোটা অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছে কিনা অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে অনেক বিষয় গোপন রেখেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সব তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।  যে ব্যাংক থেকে ফারুক এজেন্ট স্বত্ব লাভ করেছে ওই ব্যাংকের নাম আমরা তদন্তের জন্য বলতে চায় না। তা পরে জানানো হবে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম সুমন, র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক এএসপি ইমরান হোসেন খান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *