কুলাউড়ায় ঝরে পড়া ২১০০ শিক্ষার্থী পাবে শিক্ষার আলো উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রমের উদ্বোধন

বিশেষ প্রতিনিধি : কুলাউড়ায় ঝরে পড়া ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ২১০০ শিশু শিক্ষার্থী পাবেন শিক্ষার আলো। ঝরে পড়া ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পাঠদানমুখী করতে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম যাত্রা শুরু হয়েছে।

আউট অব স্কুলচিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৪) এর আওতায় উপজেলায় ৭০ টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। ৭০ টি বিদ্যালয়ে উপজেলার ঝরে পড়া ও যারা শিক্ষার আলো পায়নি ৮-১৪ বছর বয়সী ২১০০ শিক্ষার্থী এ কার্যক্রমে পাঠদানের সুযোগ পাবেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী পাঠদানের সুযোগ পাবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১ জন করে শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। বেসরকারি এনজিও সংস্থা ইরা (এফ্যারটস ফর রুরাল এডভ্যাসমেন্ট) ও আরডিআরএসের যৌথ বাস্তবায়নে ৪ বছরব্যাপী এ কার্যক্রম চলবে। এই প্রকল্পে শিক্ষার্থীরা, বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কুল ড্রেস, স্কুল ব্যাগ, বেইজসহ মাসিক ১২০ টাকা ভাতা পাবে।

শনিবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কুলাউড়ার আয়োজনে উপজেলার গাজীপুর চা বাগান উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। গাজীপুর চা বাগানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জয়ন্ত ধরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভুঞাঁ, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৌরভ গোস্বামী, আলাউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী, সাংবাদিক সাইদুল হাসান সিপন, এস আলম সুমন, মাহফুজ শাকিল প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন ইরা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুল গফফার চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইরা’র সুপারভাইজার আব্দুল লতিফ। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইরার সুপারভাইজার শফিক আহমদ, এম আই মোর্শেদ ও শিক্ষিকা সানজিদা আক্তার শাম্মিসহ অনেকে। অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া হয়।

গাজীপুর চা-বাগান উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার আখি, জামিলা আক্তার শাকি, বাবেল মিয়া ও জাবেদ মিয়া বছরের প্রথমদিন পাঠবই হাতে পেয়ে বলেন, এখন থেকে বাড়ির পাশেই স্কুলে পড়তে পারবো। পায়ে হেঁটে অনেক দূরে গিয়ে পড়তে হবেনা। পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হবো। বাবা-মায়ের মুখ উজ্জল করবো। এই স্কুলে পাঠদানের সুযোগ পেয়ে আমরা আনন্দিত।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভুঞাঁ বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে এই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুরুতে তিনমাস পাঠদানের পর মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের মেধা যাছাই করা হবে। প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার মাধ্যমে ২টি শ্রেণী করে উত্তীর্ণ হবে। এভাবে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলবে। পরবর্তীতে অন্যান্য শ্রেণীতে পাঠদানে ওইসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করা হবে। তিনি আরো বলেন, এই কার্যক্রমকে শতভাগ সফল করতে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের সাথে কাজ করতে হবে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠদান করছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, যে কোন একটি কার্যক্রম শুরু হয় খুব জাঁকজমকভাবে। কিছুদিন পর সেগুলোর শুধু সাইনবোর্ডই থাকে। কার্যক্রমের কোন সফলতা থাকেনা। কিন্তু উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা আবারো পাঠদানমুখী হয়। সেজন্য সবাইকে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যেতে হবে। আমরা নিয়মিত এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে যাবো। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা আবারো শিক্ষার আলো ফিরে পাবে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *