ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গা পিঠার উপকরণ ডলু বাশ হারিয়ে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার : চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হতো পিঠা। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। ডলু বাঁশের চুঙ্গা দিয়ে তৈরি এ পিঠা চুঙ্গাপুড়া পিঠা নামে বিখ্যাত।
এলাকার অন্যতম ঐতিহ্য এ পিঠা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মতো এখন আর গ্রাম এলাকার বাড়িতে বাড়িতে এ পিঠার দেখা মেলে না। মৌলভীবাজার জেলার কিছু কিছু এলাকায় ডলু বাঁশ পাওয়া যায়। পাহাড়ে বাঁশ নেই বলে বাজারে ঢলু বাঁশের দামও এখন বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে এই ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজারগুলোতে বিক্রির আশায়। এই বাঁশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ ডলু বাঁশ ছাড়া চুঙ্গা পিঠা তৈরি করা যায় না।
ডলু বাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ডলু বাঁশে অত্যাধিক রস থাকায় আগুনে পোড়ে না এটি, ভেতরের চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি পিঠা আগুনের তাপে সেদ্ধ হয়। চুঙ্গা পিঠা পোড়াতে খড় (নেড়া) দরকার পড়ে।
এই খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে জেলার বাজারগুলোতে মাছের মেলাও বসে। প্রতিবছরের ন্যায় কমলগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মুন্সিবাজারেও ১৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বিরাট মাছের মেলা বসে। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাকালুকি, হাইল হাওর ও নদী থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হালকা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিল মৌলভীবাজার ও সিলেটের অন্যতম ঐতিহ্য। চুঙ্গা পিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ডলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, দেওড়াছড়া ও মৃর্তিঙ্গা চাবাগান, কালাছড়া বন, বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়িতে প্রচুর ডলু বাঁশ পাওয়া যেত। তারমধ্যে চুঙ্গাবাড়ি এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ডলু বাঁশের জন্য। বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ডলু বাঁশ। কমলগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক আব্দুল বাছিত খান, ইউপি সদস্য ধনা বাউরী, ইউপি সদস্য সিতাংশু কর্মকার, মাসুদ আলী জানান, আগে কম-বেশি সবার বাড়িতে ডলু বাঁশ ছিল। এখন সেই বাঁশ আগের মতো নেই। এই বাঁশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই বাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধূম লেগেই থাকতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *