মাইকেল নংরুম : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েকজন আদিবাসী খাসি যুবককে আটকিয়ে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিকেলে সদর ইউনিয়নের ডিমাই এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। আহতরা হলেন- উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল খাসি পুঞ্জির রাজেন লংডঃ (২২), ওয়ানকেমেন সুটঙা (২৮), বিবারজেন পামথেট (২৬), তাদের মধ্যে গুরুতর আহত রাজেনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই এলাকায় স্থানীয় আদিবাসী আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর খাসিয়া পুঞ্জির মুখোমুখি হয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল খাসিয়া পুঞ্জি। খেলা চলাকালে পেনাল্টি কিক নিয়ে রেফারির সাথে কুমারশাইল পুঞ্জির খেলোয়াড়দের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় মাঠে প্রবেশ করে পেনাল্টি নিয়ে আপত্তি জানান কুমারশাইল পুঞ্জির টিম ম্যানেজার বয়োজ্যেষ্ঠ সুখমন ইয়ংনে। একই সময়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রধান অতিথি থাকা বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনও মাঠে প্রবেশ করেন। তখন তিনি কুমারশাইল পুঞ্জির টিম ম্যানেজারকে পেনাল্টি মেনে নিতে জোরাজোরি করলে টিম ম্যানেজার সুখমন তা প্রত্যাখান করে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এসময় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন সুখমন ইয়ংনেকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে চেয়ারম্যান তাকে লাঠি মারেন। বাবাকে মারতে দেখে সুখমনের ছেলে সিরাজ উদ্দিনকে ধাক্কা দেন। এরপর সিরাজ চেয়ারম্যান পক্ষের লোকজন কুমারশাইল পুঞ্জির খেলোয়াড়দের অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং কয়েকজনকে মারধর করেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে কুমারশাইল পুঞ্জির খেলোয়াড়দের উদ্ধার করে। কুমারশাইল পুঞ্জির টিম ম্যানেজার সুখমন ইয়ংনে বলেন, রেফারি ৫ নম্বর খেলোয়াড়দের পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে আমার দলের খেলোয়াড়রা তাতে আপত্তি জানায়। পরে আমি গিয়ে আপত্তি জানালে খেলায় প্রধান অতিথি হিসাবে থাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন পেনাল্টি মেনে নিতে আমাকে চাপ দেন। আমি তার কথা প্রত্যাখান করে আমার দল নিয়ে মাঠে থেকে বেরুবার চেষ্টা করলে সিরাজ উদ্দিন আমার কলার চেপে ধরে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এসময় আমি মাটিতে পড়ে যায়। তখন তিনি আমাকে লাঠি মারেন। আমার ছেলে আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে চেয়ারম্যান সহ তার পক্ষের লোকজন আমাদের অবরুদ্ধ করে এবং মারপিট করেছে। এতে আমার খেলোয়াড় এবং সমর্থক আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। এরমধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেটে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তিনি কল ধরেননি। উত্তর শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় পেনাল্টি নিয়ে সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন আমার ইউনিয়নের কুমারশাইল পুঞ্জির টিম ম্যানেজার সুখমন ইয়ংনেকে চড়, থাপ্পড় ও লাঠি মারেন। বাবাকে মারতে দেখে সুখমনের ছেলেও চেয়ারম্যানকে আঘাত করে। এরপর স্থানীয় লোকজন কুমারশাইল পুঞ্জির টিম ম্যানেজার, খেলোয়াড় ও সমর্থকদের অবরুদ্ধ করে এবং কয়েকজন মারধর করেন। খবর পেয়ে আমি এবং থানার ওসি সাহেব সহ পুলিশ নিয়ে তাদের উদ্ধার করি। গুরুতর আহত একজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে। বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, দুই আদিবাসী দলের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। খেলায় পেনাল্টি কুমারশাইল পুঞ্জির বিপক্ষে যায়। এটা তারা মানেনি। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন কুমারশাইল পুঞ্জির একজনকে থাপ্পড় মারেন। তারাও চেয়ারম্যানকে ধাক্কা দিয়েছেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। পরে পুলিশ পাঠিয়ে উত্তেজনা নিরসন করা হয়েছে। উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থানায় আসছিলেন। ঈদের পরে উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি বসে সমাধান করা হবে।