জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :
মোবাইল ফোনে হয় তাদের প্রেম। তারপর দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। ভালোবাসার মানুষের সাথে ঈদের পর ঘুরতে গিয়ে দুই কিশোরী বোন তাদের প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল। প্রেমিকদের পাঠানো সিএনজি অটোরিক্সা চড়ে দেখা করতে আসেন কিশোরী দুই বোন। সেখানেই ঘটে দূর্ঘটনা। প্রেমিকদের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে বড় বোনের প্রেমিক তাকে টিলার ওপর থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেন। এ সময় বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে কিশোরীর শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। আর ছোট বোনের প্রেমিক তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই কিশোরীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (১০ মে) জুড়ী থানায় একটি অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করা হয়।
মামলার এজাহার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই কিশোরীর এক জনের বয়স ১৫ ও অপর জনের বয়স ১৩। তাদের বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। সম্প্রতি মুঠোফোনের মাধ্যমে দুই কিশোরীর সঙ্গে রাসেল ও জীবন নামের দুই তরুণের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রাসেলের বাড়ি জুড়ী উপজেলার চাটেরা এবং জীবনের বাড়ি বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নে। তাঁরা ৭ মে দুই কিশোরীকে বেড়ানোর কথা বলে পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের রঙ্গীরকুল এলাকায় একটি নির্জন টিলায় নিয়ে যান। সেখানে রাসেল তাঁর প্রেমিকাকে কূ-প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখান করে। একপর্যায়ে তিনি (রাসেল) তাকে ধাক্কা মারেন। এতে সে গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। এ সময় বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে তার শরীরের পিঠ, বুক ও পেট ঝলসে যায়। বিদ্যুস্পৃষ্ঠের সময় বিকট শব্দ পেয়ে সেখানকার আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে মৌলভীবাজারের জেলা সদর হাসপাতাল ও সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ঘটনার পর রাসেল ও জীবন কিশোরীর ছোট বোনকে নিয়ে সটকে পড়েন। ওই কিশোরীর নিখোঁজের ব্যাপারে তার বাবা গত রোববার (০৮ মে) জুড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার পর জীবন কিশোরীর ছোট বোনকে বিয়ের প্রলাভন দেখিয়ে সিলেট নগরের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে তিনি তাকে ধর্ষণ করেন। গত রোববার (০৮ মে) রাতে জীবন তাকে জুড়ী উপজেলা সদরের জাঙ্গিরাই চত্বরে একা ফেলে রেখে চলে যান। খবর পেয়ে স্বজনেরা গিয়ে তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে মৌলভীবাজারের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কিশোরীদের বাবা (৫০) বাদী হয়ে মামলা করেন।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী আজ মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা জামাল মিয়া বাদী হয়ে ওই দুই প্রেমিককে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার বিকেলে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।