কুলাউড়ায় সামাজিক বনায়নের অর্ধশত গাছ কর্তনের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে বনবিভাগের কোন অনুমতি না নিয়ে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর অর্ধশত গাছ কর্তনের অভিযোগ উঠেছে ওই বনায়নের কয়েকজন উপকারভোগীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপকারভোগী অন্য সদস্যরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। রোববার বনবিভাগের কুলাউড়ার রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন সরেজমিনে গিয়ে গাছ কাটার সত্যতা পান এবং কর্তনকৃত গাছগুলো জব্দ করার নির্দেশনা দেন। এ ঘটনায় বনায়নের উপকারভোগী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নূর আহমদ চৌধুরী গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে কুলাউড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বনবিভাগ ও স্থানীয় উপকারভোগী সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে কুলাউড়ার মুরইছড়া বনবিটের আওতাধীন হাজীপুর ইউনিয়নের মনু বাজার হতে মজমপুর শিকিরজানের পুল, নছরের দোকান হতে দক্ষিণ ভূঁইগাঁও মসজিদ, নাথ বাড়ি হতে চান গাঁও মসজিদ এবং হাজীপুর ত্রিমোহনী হতে পাবই বটের দিঘী ও পীরের বাজার পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কে আকাশমনি ও বেলজিয়াম প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ রোপণ করে বনায়ন করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ জুন সামাজিক বনায়নের আওতায় উল্লেখিত সড়কের দুইপাশে গাছ রোপণের চুক্তি করা হয়। এই সমিতির আওতায় ২৫ জন উপকারভোগী রয়েছেন। বর্তমানে গাছগুলো অনেক মূল্যবান ও বড় হয়েছে। সম্প্রতি বনবিভাগ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ঝড়ে পড়া ভাঙ্গা এবং শুকনো রকমের কয়েকটি গাছ কর্তনের কথা জানান সমিতির কয়েকজন উপকারভোগী। কিন্তু সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্য সদস্যদের না জানিয়ে কয়েকটি গাছ কাটার কথা বলে প্রায় অর্ধশত গাছ কেটে নেন স্থানীয় পীরের বাজারের বাসিন্দা মাওলানা হাবিবুর রহমানের ছেলে সমিতির সদস্য উপকারভোগী আবরার উজ্জামান, হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ছত্তারের ছেলে আবুল হোসেন, মৃত নছির আলীর ছেলে মকদ্দছ আলী, দাউদপুরের বাসিন্দা মৃত আব্দুল করিমের ছেলে আব্দুল মোহিত ও মানগাঁওয়ের বাসিন্দা প্রয়াত আব্দুল বারীর ছেলে সানি। এমনটি অভিযোগ করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বনায়নের উপকারভোগী নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল। তিনি দাবি করেন, কর্তনকৃত গাছগুলোর বাজার মূল্যে প্রায় দুই লক্ষ টাকা। গাছের বড় বড় টুকরো রাতের আধারে অন্যত্র বিক্রি করা হয়েছে। ছোট ছোট টুকরো গুলো স্থানীয় পাইকপাড়া, হাজীপুর স’মিল, হাজীপুর বাজারে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, সামাজিক বনায়নের বড় বড় গাছগুলো কয়েকদিন আগে দিনের বেলায় কাটতে দেখেছেন। গাছগুলো কাটতে কারো অনুমতি ছিল কি-না তারা তা জানতেন না। সরেজমিনে কাটা এসব গাছের বড় বড় গোড়ালি সড়কের পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে এবং অনেক গাছের মোথা তুলে নেয়া হলে সেখানে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। হাজীপুর স’মিলের পাশে, হাজীপুর বাজার এবং পাইকপাড়া বাজারে কর্তনকৃত গাছের তিনটি স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সড়কের দুই পাশে মূল্যেবান অনেক গাছ রয়েছে। গাছ কাটার সাথে জড়িত সানি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, আমার বাবা আব্দুল বারী বনায়ন সমিতির সদস্য ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদেরকে ভাগ থেকে বঞ্চিত করতেই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে অভিযুক্ত সানি বনবিভাগের কর্মকর্তার কাছে বড় দুইটি গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করলেও গণমাধ্যমকে তিনি ওই দুইটি গাছ কাটার বিষয় অস্বীকার করেছেন।অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল মোহিত বলেন, গাছগুলো ঝড়ে পড়ে ছিল। এই সড়কে শুকনো গাছের ডাল পড়ে কয়েকটি দূর্ঘটনাও ঘটেছিল। সামাজিক বনায়নের সকল উপকারভোগীর মতামতের ভিত্তিতে ঝড়ে পড়া ও শুকনো গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত হয়। গাছ কাটার সময় সমিতির সদস্য ও ইউপি সদস্য নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলসহ সমিতির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গাছ কাটার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স ও বনবিভাগকে জানানো হয়েছে। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী সমিতির সভাপতি ফারুক আহমদ পান্না বলেন, এতগুলো গাছ কাটার বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্তের কথা আমি জানিনা। সম্প্রতি ঝড়ে পড়া শুকনো কয়েকটি গাছের বিষয়ে বনবিভাগকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। বনবিভাগ সরেজমিনে এসে গাছগুলো মার্কিং করার কথা ছিল কিন্তু সমিতির কয়েকজন সদস্য বনবিভাগের সিদ্ধান্তের কোন অপেক্ষা না করে তারা ব্যক্তিগতভাবে গাছগুলো কর্তন করেন।এ বিষয়ে হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স মুঠোফোনে বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। সম্প্রতি ঝড়ে পড়ে এসব গাছ ও ডালপালা ভেঙ্গে পড়ায় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে বনায়নের কয়েকজন উপকারভোগী গাছ কাটার জন্য আমাকে বলেন। তখন তারা বনবিভাগের সাথে কথা বলে প্রায় ১০টি শুকনো গাছ কেটে কয়েকটি এলাকায় স্তুপ করে রেখেছেন।বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বনবিভাগকে না জানিয়ে এভাবে সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার কোন নিয়ম নেই। সরেজমিন গিয়ে ৩২টি গাছ কাটার সত্যতা পেয়েছি। গাছের ৮০ টুকরো কাঠ ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *