তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে শুক্রবার বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এতে তিস্তা নদীর তীরবর্তী লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে ও রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার অনেক মানুষ।

তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা যায়, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাষ কেন্দ্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকা ব্যারাজ এলাকায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎ পানি প্রবাহ বেড়ে যায় তিস্তায়। রাতে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজের ভাটিতে নদী তীরবর্তী বেশ কিছু গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বন্যাকবলিত তিস্তা এলাকার জহুরুল জানান, বৃহম্পতিবার সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। রাতেই ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে পড়ে। এখন আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। আর যাদের ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে তারা বাধের রাস্তায় থাই নিয়ে আছেন।

খুনিয়াগাছ এলাকার আব্দুল মজিদ জানান, বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। রাতে পানি বাড়ায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ উচু স্থানে যেতে পারেনি। এখন পানির মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে। চুলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সকাল থেকে না খেয়ে আছি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরও কি পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে পানি আরও বাড়তে পারে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নদীপাড়ের মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা ভিত্তিক পর্যাপ্ত পরিমাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি কোন এলাকার চাহিদা থাকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

—ইউএনবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *