সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদেও হিসাব প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অন্তত দু’বার সম্পদের হিসাব চেয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব নিয়ন্ত্রণাধীন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-সংস্থায় দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনো ৯৫ শতাংশেরও বেশি সরকারি কর্মচারী সম্পদের হিসাব দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯তে সম্পদের হিসাব নেয়া সংক্রান্ত বিদ্যমান ক্ষমতাও প্রয়োগ হচ্ছে না। এমনকি একাধিকবার প্রয়োগের উদ্যোগ নিলেও কর্মচারীদের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে আরো কঠোর করে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সচিব কমিটিতে বিদ্যমান বিধিমালাকে দুর্বল করে দেয়ার পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-২০২২’ সংশোধন প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাশাপাশি স্ব স্ব দপ্তর সংস্থা তাদের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়। বিদ্যমান বিধিমালায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদের হিসাব দেয়ার বিধান থাকলেও আয়কর বিবরণীর বিষয়টি উল্লেখ নেই। ফলে যারা আয়কর বিবরণী জমা দেয় তারা এটিকে অজুহাত দেখিয়ে সম্পদের হিসাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া থেকে বিরত থাকছে। অথচ বিধিমালার খসড়া অনুযায়ী এনবিআরে সম্পদের হিসাব দিলেও সরকারি কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে পৃথকভাবে ওই হিসাব জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত ছক পূরণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৫ বছর অন্তর ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে।
সূত্র জানায়, সচিব কমিটির বৈঠকে এনবিআরের মাধ্যমে দেয়া ট্যাক্স রিটার্নই যথেষ্ট বলে মতামত দিয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে তা আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু এনবিআর থেকে রিটার্নের তথ্য অন্য সরকারি দপ্তর-সংস্থাকে দেয়ার বিধান নেই। বিদ্যমান আইনে ওই সুযোগ আছে কিনা তা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে এমওইউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) স্বাক্ষর করে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা ওই দিকটিও খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু এমওইউ দিয়ে আইনি বাধা পার হওয়ার সুযোগ নেই। বস্তুত সম্পদের হিসাবের বিষয়টিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলার জন্যই ওই ধরনের পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। যারা যখন ক্ষমতায় থাকে তারা নিজেদের সময়টা নির্বিঘেœ পার করে দিতে চায়। কেউ হিসাবের মুখোমুখি হতে চায় না। যদি এনবিআরে রিটার্ন দাখিল করাই যথেষ্ট হয় তাহলে ওই হিসাব পাওয়ার জন্য আর চেষ্টার দরকার ছিল না। আর এনবিআর তো সরকারি প্রতিষ্ঠানই। তারা তো তাদের মতো কার্যক্রম গ্রহণ করছেই।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে দুর্নীতি রোধ করার জন্য সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রদানের বিদ্যমান বিধিমালাটি কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। তাহলেই দুর্নীতির লাগাম অনেকটাই টানা সম্ভব। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় কঠোরতা না এনে তা দুর্বল করে ফেললে দুর্নীতি আরো বাড়বে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতেও দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগের কথা উল্লেখ আছে। আশা করা যায় এমন অবস্থায় বিদ্যমান বিধিমালা বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকার কঠোরভাবে দেখবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, সচিব কমিটি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এখন ওই বিষয়গুলোর আইনগত দিক খতিয়ে দেখবে লেজিসলেটিভ বিভাগ। তারপর বিধিমালার সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে সচিব কমিটির পর্যবেক্ষণগুলো চূড়ান্ত কিছু নয়, আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *