সৈয়দপুরের সেই কলেজের ৩১ জন ঢাবিতে, বুয়েটে ১৬, মেডিক্যালে ৩৯!

নীলফামারী প্রতিনিধি : এক কলেজের ৩১ শিক্ষার্থী একসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ক’ ইউনিটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথমর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

কলেজটির অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, সোমবার ঢাবির বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ৩১ শিক্ষার্থী একসঙ্গে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জন ছেলে ও পাঁচজন মেয়ে।

জানা গেছে, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট ২৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২৬৫ জন উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে ২৪৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এছাড়া এবার ১৬ জন বুয়েটে ও ৩৯ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বলেন, সৈয়দপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। এ কলেজের শিক্ষার্থীরা বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। শিক্ষার্থীদের এ অর্জনে আমরা গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালে আমরা মুখোমুখি ক্লাস নিতে পারিনি। তবে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস চালু ছিল। নিয়মিত তদারকি ছিল।

অপরদিকে সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এবার। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এ প্রতিষ্ঠানের ১৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৩৯ জন শিক্ষার্থী মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে। একসঙ্গে এত শিক্ষার্থী বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় উচ্ছ্বাস ও আনন্দে ভাসছেন শিক্ষার্থীরা, খুশি শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিট লিস্টে পঞ্চমতম হয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নাহিদ হোসেন রিদম বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বুয়েট বা মেডিক্যালে ভর্তির, তেমনি আমারও ছিল। আল্লাহর রহমত, আমি ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য যে কতটা সুখের, আনন্দের, তা বলে বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই।

সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বলেন, আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের গ্রিন-ক্লিন লার্নিং পদ্ধতিতে পড়ানোর চেষ্টা করি। এতে সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা ও মননশীলতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিবারই দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখান থেকে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। এ বছরেই ৩৯ জন মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। এসব সাফল্যের জন্য চলতি বছরের মার্চে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। সব মিলিয়ে এমন সাফল্যে আমরা গর্বিত।

প্রতিষ্ঠানটিতে শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগেই পড়ার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা ক্লাসরুমেই সব পাঠ শেষ করার চেষ্টা করি এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ক্লাস পরিচালিত হয়। এছাড়া অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের একটি সেতু বন্ধন থাকে, যাতে বাড়িতে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত তাদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখেন।

১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানে গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়। তবে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলার লক্ষ্য হলেও প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পান উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয় এবং আগের নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ রাখা হয়।-বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *