হারিছ মোহাম্মদ : মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং চরমে পৌঁছেছে। সরকারি নির্দেশনায় ১/২ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও পিডিবি ৯-১০ ঘন্টা লোডশেডিং করছে। এতে তীব্র গরমে হাঁপিয়ে উঠছে মানুষ। বিশেষকরে শিশু ও বয়স্করা লোডশেডিংয়ের যাঁতাকলে পরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জানা যায়, জুড়ী উপজেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র ১২ হাজার ৫ শ ৯৩ জন গ্রাহক রয়েছেন। সোমবার থেকে জুড়ী উপজেলায় তীব্র গরমে অস্বাভাবিক লোডশেডিং শুরু করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। যদিও বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক এক থেকে দুইঘন্টা লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে লোডশেডিং কোন এলাকায় কখন, কত সময় হবে তা সরকারিভাবে আগেই জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখনও জুড়ীতে পিডিবির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারছেন না। তবে সরকারি এ নির্দেশনাকে পুঁজি করে পিডিবি দিনে ৯-১০ ঘন্টা লোডশেডিং করছে। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের এ লোডশেডিংয়ে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলার বেশ কিছু গ্রাহকের সাথে আলাপ হলে তারা জানিয়েছেন, ৯- ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। তবে এই পরিস্থিতির জন্য জুড়ী পিডিবি কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহও মিলছে না। এ জন্যই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলা পিডিবি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় তের হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবা দেওয়ার জন্য ১১ কেবি ও ৩৩ কেবি ৩ টি করে ৬ টি লাইন রয়েছে। উপজেলায় ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ২ থেকে আড়াই মেগাওয়াট। ফলে দিনে রাতে ২৪ ঘন্টায় উপজেলার ৫ টি ফিডারে কমবেশি ৮-৯ ঘন্টা লোডশেডিংয় করা হচ্ছে।
উপজেলার চৌমুহনীর গাউছিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সত্ত্বাধিকারী ফারুক আহমেদ বলেন, লোডশেডিং এর কারণে যথাসময়ে কাস্টমারের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। কাজ করতে সকাল সাড়ে ৯টায় দোকান খুললেও দিনভর চলে বিদ্যুৎতের আসা-যাওয়ার খেলা। এতে করে আমাদের ব্যবসা টিকানো দায় হয়ে পড়েছে।
কাপড় সেলাইয়ের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, ‘দিনে এক ঘন্টা কারেন্ট দিলে তিন ঘন্টা মিলছে না। কাস্টমারের কাছ থেকে কাপড়ের অর্ডার নিয়ে সময়মতো কাজ করে দিতে পারছি না। এতে কাজও কমছে আমাদের। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
ট্রাভেলস ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন,
দিনে রাতে মিলিয়ে প্রায় ১০/১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না।ফলে বিদ্যুতের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁচেছে। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
আলাপকালে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সারাদিন বিদ্যুতের আসা যাওয়ার খেলায় আমরা অতিষ্ঠ। আবার নিয়ম করা হয়েছে রাত ৮টার মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। তাহলে ব্যবসা করার সময় কই? টানা করোনা ও বন্যার কারণে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাত ৮ টার মধ্যে দোকান বন্ধের নির্দেশের ফলে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী রাত ৮টার পর দোকান বন্ধের নির্দেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে জুড়ী পিডিবির উপ – সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম বলেন, বিদ্যুৎ এর বর্তমান পরিস্থিতি একটি জাতীয় সমস্যা। উপজেলায় ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ২ থেকে আড়াই মেগাওয়াট। তাই বাধ্য হয়ে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। আশা করি সংকট কেটে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এ সময় তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।