ফাহিমা আক্তার সুমি: দফায় দফায় বাড়ছে শিশুখাদ্যের দাম। মাসের ব্যবধানে প্রতিটি শিশুখাদ্যের মূল্য ২৫-৩০ টাকা করে বেড়ে যাচ্ছে। এক বছর আগেও শিশুদের ৪০০ গ্রামের প্রাইমা দুধ বিক্রি হতো ৫৪০ থেকে ৫৪৫ টাকা; এর দাম এখন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা হয়েছে। শিশুখাদ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে অভিভাবকরা। শুধু শিশুখাদ্য নয়, শিশুদের ব্যবহৃত প্রায় সবকিছুর দাম বাড়তি। ক্রেতারা বলছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫-৩০ টাকা করে দাম বাড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের খাবার কিনতে এসে হতাশ অভিভাবকরা। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনে ফিরে যাচ্ছেন। প্রাইমা-১ এবং ২, ৪০০ গ্রামের ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, আগে ছিল ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা, নিডো ৪০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৭৫ টাকা, হরলিকস জুনিয়র ৪১০ টাকা, আগে ছিল ৩৮০ টাকা, বায়োমিল ৬৯০ টাকা, আগে ছিল ৬৫০ টাকা, লেকটোজেন ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০০ টাকা হয়েছে। মার্কস ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, ডিপ্লোমা দুই’শ গ্রাম ১৪০ থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ফ্রেস মিল্ক ৩৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০০ টাকা। এ ছাড়াও ডিল্যাক, ডানোসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। ফার্মগেটের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে শিশুর জন্য দুধ কিনতে এসেছিলেন লামিয়া আক্তার। দাম শুনে তিনি অবাক। কিন্তু নিরুপায় মা এক বছরের বাচ্চার খাবার না কিনে কীভাবে ফিরবেন। লামিয়া বলেন, বাচ্চার খাবারের দাম শুনে আমি হতাশ। আগে থেকেই বাচ্চাকে প্রাইমা দুধ খাওয়াই। কিন্তু দাম কিছুদিন পর পর নিতে আসলে দেখি বাড়তি। ২৫-৩০ টাকা বাড়ছে। আমার স্বামী একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ২৫ হাজার টাকা বেতন পায়। বাচ্চার দুধের খরচই মাসে কয়েক হাজার টাকা চলে যায়। মাসের খরচের হিসাব মিলাতে বসলে হিমশিম খেতে হয়। আকাশ আহমেদ বলেন, দুই ছেলে আমার। ছোট ছেলের বয়স এক বছর। বড় ছেলের পাশাপাশি ছোট ছেলেকেও গুঁড়োদুধ খাওয়াতে হয়। ওরা অন্য কোনো বাড়তি খাবার খেতে চায় না। যখনই সন্তানদের জন্য দুধ কিনতে আসি তখন দেখি দাম বাড়তি। আমরা তো মানুষ। সংসারে আয় নেই। বড়রা কিছু একটা খেয়ে বাঁচতে পারে কিন্তু ছোটদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখবো। ওরা তো শুধু এসব খাবারের উপর নির্ভরশীল। তিন মাসের নাঈমকে দিনে তিন-চার বার ফিডার খাওয়াতে হয়। তার মা সালমা বলেন, ছেলেকে লেকটোজেন খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়।
এত ছোট বাচ্চা দুধ ছাড়া অন্য খাবার খেতে পারে না। বাচ্চার পেছনেই মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা চলে যায়। এমনিতে সবকিছুর দাম উর্ধ্বমুখী। বাচ্চার খাবার কিনতে কিনতে বেতনের অর্ধেক টাকাই শেষ হয়ে যায়। বিপ্লব হালদারের প্রতি মাসে শিশুদের খাবারের পেছনে খরচ হয় চার-পাঁচ হাজার টাকা। তিনি বলেন, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরমধ্যে সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ছে শিশুদের খাবারের দাম। সবকিছুরই অসহনীয় দাম। আগে ৪০০ গ্রামের কৌটার দুধ ৪০০ থেকে ৪৪৫ টাকার মধ্যে কিনতাম এখন সেটি ৭০০ টাকার উপরে গিয়েছে। বাচ্চাদের তো না খাইয়ে রাখতে পারি না। কোনো না কোনোভাবে টাকা যোগাড় করে কিনতে হয়। মিতা টি হাউজের বিক্রেতা তারেক হোসেন বলেন, শিশুখাদ্যের পাশাপাশি মার্কস ক্রিম মিল্ক পাউডার ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, ডিপ্লোমা দুইশত গ্রাম ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ফ্রেস মিল্ক ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়াও ডিল্যাক, ডানোসহ সব কিছুর দাম বাড়তি। সপ্তাহে ১০-২০ টাকা করে বাড়ছে। কোনো কোনোটা ১০০ টাকা করে বেড়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শিশুখাদ্যের পাশাপাশিও খোলা গুঁড়োদুধ আগে ২৫ কেজির এক বস্তা ক্রয় করতাম ৮ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে আর এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২ শ’ টাকা।