জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বাড়ির পাশে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখা পপি সরকার (১২) নামে এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের একটি বাড়ির পাশ থেকে পপির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত পপির বাবা দিগেন্দ্র সরকার ও মা আশুলতার দাবি, ১৫ দিন আগে তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ করে স্থানীয় বাসিন্দা সুরমান মিয়া (২৫)। পরবর্তীতে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফের ধর্ষণ করে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
পপি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামের দিগন্দ্র সরকারের বড় মেয়ে। দিগেন্দ্র ৪ মাস ধরে উপেজেলার সুলতানপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক শিক্ষক কামাল হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন।
পুলিশ ও কিশোরীর পিতার ভাষ্যমতে জানা যায়, সোমবার রাত ১২টার দিকে পপি তার মায়ের সাথে ঘুমাতে যান। সাড়ে তিনটার দিকে আশুলতা ঘুম থেকে ওঠে দেখেন তাঁর মেয়ে ঘরে নেই। এ সময় আশুলতা ও দিগেন্দ্র ঘরের জানালা খোলা এবং জানালার ওপর বিস্কুট ঝুলানো রয়েছে দেখতে পান। অনেক খোঁজাখুজি করার পর সকাল ৯টার দিকে তাঁদের ঘরের পিছনে একটু অদূরে গলায় ওড়না পেঁচানো ও মাটিতে উপুড় অবস্থায় পপির দেহ দেখতে পান। এ সময় পপির নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। পরে খবর পেয়ে দুপুরে কুলাউড়া থানার উপ পরিদর্শক মো: হারুনুর রশীদ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যান।
পপির পিতা দিগেন্দ্র সরকার বিকেল সাড়ে ৪টায় গণমাধ্যমকে বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে তার মেয়ে পপি সরকারকে আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করেন ওই এলাকার বাসিন্দা আইসক্রিম বিক্রেতা সুরমান মিয়া। সুরমান স্থানীয় ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকনের আইসক্রীম ফ্যাক্টরীতে চাকরি করে। আমি বিষয়টি থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন ও ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন জোরপূর্বক বাড়ির মালিক (দিগেন্দ্র যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন) কামাল হোসেন চৌধুরীর রবিরবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শালিসী বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। বৈঠকে সুরমানের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আমাকে দেওয়ার সিদ্বান্ত নেয়া হয় এবং বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে এই মর্মে সাদা কাগজে আমাকে টিপসই দেওয়ার জন্য বলেন ওই দুই ইউপি সদস্য। আমি বিষয়টি মানিনি। থানায় অভিযোগ করার চেষ্টা করি। তখন আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখান সুরমান ও কাজল। এর জেরে সোমবার রাতে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে সুরমান ও কাজল আমার মেয়েকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় কোন শালিসী বৈঠক করা যায় না। আমি কোন বৈঠকে ছিলাম না।’ হয়তো আইসক্রীম ফ্যাক্টেরীর মালিক যিনি তিনি বৈঠক করতে পারেন। মেয়েটির মৃত্যুর খবর সকালে পেয়ে থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল তৈরি করে।
তবে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা সত্য নয়। দিগেন্দ্রর মেয়ে পপি মানসিক রোগী। সুরমান ওই এলাকায় আইসক্রীম বিক্রি করতে গেলে পপি তাঁর কাছে আইসক্রীম চায়। তখন সুরমান তাকে আইসক্রমি দেয়নি। এজন্য পপির মা ও বাবা মিলে সুরমানকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে বাড়ির মালিক কামাল চৌধুরীর দোকানে স্থানীয় মেম্বার আব্দুল মতিনসহ আমরা পপির মা বাবাকে নিয়ে বৈঠক করি।’
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুছ ছালেক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকান্ড। থানায় পপির পিতা বাদি হয়ে সুরমান ও কাজলকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বিষয়টি পুরোপুরিভাবে জানা যাবে। ধর্ষণের ঘটনায় শালিসী বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো কি ঘটেছিলো ওই বৈঠকে।’