বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিদেশিদের দেয়া হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিম বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিদেশিদের দিতে চায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ওই বিষয়ে সম্প্রতি বেবিচকের বোর্ড সভায়ও পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে দেশের বিমানবন্দরগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স তৃতীয় টার্মিনালের দায়িত্ব পাচ্ছে না। তাতে বিদেশিদের হাতে বড় অঙ্কের টাকা চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে দ্রুত এগিয়ে চলেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে টার্মিনালটি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ চালু হবে। আর বেবিচক শুরু থেকেই তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিদেশি সংস্থার হাতে দিতে আগ্রহী। আর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। ওই ব্যাপারে জাপান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইজারল্যান্ড প্রস্তাবনা দিয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি নির্মাণ হলে দ্বিগুণেরও বেশি হবে যাত্রী পরিবহন ও পণ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা। বেসরকারি সংস্থার হাতে থাকে লাগেজ হ্যান্ডলিং, পণ্য লোড-আনলোডসহ টার্মিনালের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ। আর বেবিচকের অধীনে প্রশাসনিক, নিরাপত্তা, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ব্যবস্থা থাকবে। যদিও বর্তমানে দেশের সবক’টি বিমানবন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম বেবিচক ও বাংলাদেশ বিমান পরিচালনা করছে। কিন্তু হঠাৎ করে শুধু একটি টার্মিনালের দায়িত্বে বিদেশিদের হাতে দেয়া হলে কীভাবে সমন্বয় করা হবে, কী ধরনের সুবিধা-অসুবিধা হবে সব বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা নাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭ সালে একনেক শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। সেজন্য প্রথমে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ধরা হলে পরে প্রকল্প ব্যয় আরো ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালের শেষদিকে টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাইকা। জাপানের সিমুজি ও কোরিয়ার স্যামসাং যৌথভাবে ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যে কোনো বিমানবন্দরের আয়ের অন্যতম উৎস গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বেড়ে দ্বিগুণ হবে এবং তা থেকে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশি সংস্থা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পেলে হাতছাড়া হবে সরকারের ওই অর্থ।
এদিকে এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাহিদ হোসেন জানান, তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে তা বেবিচকের এখতিয়ার। যাদের ভালো মনে করবে তারা তাদেরই দেবে। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অনেক উন্নত হয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, যাত্রীসেবা ও কর্মকা-ে জবাবদিহি নিশ্চিতে বেবিচক শুরু থেকেই তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা বেসরকারি খাতে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বেবিচকের বোর্ড সভায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। হযরত শাহজালালসহ দেশের সবক’টি বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে বিমান। কিন্তু তাদের কাজ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও সময় এবং সুযোগ রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেতে হলে বিমানকে ভালো কিছু করে দেখাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *