ড. মোহাম্মদ আবু তাহের : বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের যাবতীয় জ্ঞানভান্ডারের রক্ষক হিসেবে পরিগনিত। জ্ঞানকে প্রজ্ঞায় রূপান্তরিত করে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে উপস্থিত করার দায়িত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের। সমাজ ও রাষ্টের নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে সুস্থ মানসিকতা ও উচ্চ মনন সৃষ্টি করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্য। সত্যের অনুসন্ধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। গত ৫০ বছরে নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষায় অনেক পরির্বতন হয়েছে। ১৯৯১ সালে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৬ টি। কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলনা। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০০ এর ও বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫০ এর ও বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বদৌলতে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ার সূযোগ পাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন নামীদামী প্রতিষ্টানে চাকরি করছেন। বিদেশে ও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করার জন্য যাচ্ছেন। এতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবছরই বাড়ছে।
২০২১ সালে সারাদেশে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাশ করেছে। এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী দেশে পড়ার সুযোগ না পেলে অনেকের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে হতো। এবং দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যেতো বিদেশে। আর যারা অসচ্ছ্বল পরিবারের সন্তান তাদের আর শিক্ষা গ্রহন করা সম্ভব হতো না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে দেশের টাকা ও মেধা দেশেই থেকে যাচ্ছে। কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম দূর্বলতা প্রকাশ পেলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অসচ্ছল ও মেধাবীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহনের জন্য সুবিধা রয়েছে সেখানেও অনেক দূর্বলতা ও অনিয়ম রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি সহিংসতার কথা বলা যায় তাহলে দেখা যাবে গত ৫০ বছরে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সহিংসতায় অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণ দিতে হয়েছে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় হউক সরকারি কিংবা বেসরকারি দেশী কিংবা বিদেশি সবখানেই সমস্যা যেমন আছে সম্ভাবনাও আছে অনেক।
পৃথিবীর সব দেশের আছে সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। পৃথিবীর অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেগুলো আন্তর্জাতিক মানের। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবী বিখ্যাত একটি স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য, ফ্রাংকলিন ডি রূজভেল্ট, হেনরি কিসিঞ্জার বারাক, ওবামা, বিল গেটস, জন এফ কেনেডি, টি এস ইলিওট, মার্ক জুকারবার্গসহ অন্তত শতাধিক দুনিয়া পাল্টে দেওয়া মানুষের নাম বলতে গেলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসে তা হলো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। আমেরিকার আটজন প্রেসিডেন্ট এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। বর্তমান পৃথিবীর অন্তত ৬২ জন বিলিয়নিয়ার এ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাছাড়া ১৫৮ জন নোবেল বিজয়ী, ১০৮ জন অলিম্পিক মেডেল বিজয়ীর নাম রয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকায়।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানচর্চার আধার। সেখানে জ্ঞানচর্চা মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে জ্ঞানচর্চার চেয়ে দলীয়করণ চর্চাই প্রধান হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের দেশে প্রায় ৩৬ হাজার স্কুল ৫০০টির বেশি কলেজ ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, ৭০টির বেশি মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ টির বেশি বেসরকারি শিক্ষা ইনষ্টিটিউট রয়েছে। যেভাবে মানুষ বাড়ছে সেই হারে শিক্ষার্থী ও বাড়ছে সুতরাং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টানকে নিরুৎসাহিত করা যাবে না। প্রয়োজন হলো সরকারি বেসরকারি সব ক্ষেত্রে শিক্ষার মানোন্নয়নে মনোনিবেশ করা। দেশের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক ও প্রশাসনকে পবিত্র দেখতে চায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক শাখায় শিক্ষাদান চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলেটের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগই গতিশীল নেতৃত্ব, স্বনামধন্য, খ্যাতিমান ও মেধাবী শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তুলনামূলক কম ফি নেয়া হয়ে থাকে। কখনও অতিরিক্ত ফি নেওয়া হয় না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আমেরিকান দুতাবাস পরিচালিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় আমেরিকান কর্ণার। এছাড়াও ২০১৪-২০১৫ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যাথিগ্রীন নামে একজন আমেরিকান মেধাবী শিক্ষক। বিশাল মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সাথে সাথে প্রকৃতির নান্দনিক পরিবেশের কারণে মনে অন্যরকম এক অনুভুতির উদ্রেক করে।সম্মানিত উদ্যোক্তাদের প্রতি শ্রদ্ধাও ভালবাসা সৃষ্টি করে। আসলে মানুষ সম্পদশালী হতে পারে, বিত্তবৈভবেরও অধিকারী হতে পারে কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো সম্পদ দিয়ে সম্পদকে enjoy করা যায় না। জীবনকে উপভোগ করতে হলে একটা সুন্দর হৃদয় লাগে। সুন্দর হৃদয়ের অধিকারী বলেই উদ্যোক্তারা সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে এত বিশাল জায়গা নিয়ে অসাধারণ কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে সিলেট সহ দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে আশার আলো, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি কামনা করি। মধ্যবিত্তের সন্তানদের জন্য উচ্চ শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক আন্তরিক। সিলেটে উচ্চশিক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় অসাধারন অবদান রাখছে। ২০২১ সালের সিলেট বোর্ড থেকে এইচ এস সি পাশ করেছে ৬৩ হাজারে বেশি। প্রতি বছরই সিলেট বোর্ড থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী এইচ এস সি ও এস এস সি পাশ করেন। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: শহীদ ঊল্লাহ তালুকদার দেশের অন্যতম প্রথিতযশা শিক্ষাবীদ। তিনি মেধায় পান্ডিত্যে এক উজ্জ্বল শিক্ষক। এই ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে জ্ঞানদীপ্ত ও মুক্ত চিন্তার প্রশাসন। সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে এক বৈপ্লবিক ঘটনা। এই ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের রয়েছে গৌরবোজ্জল ভূমিকা। সিলেট বিভাগের চারটি বার এসোসিয়েশনে এই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক তালিকাভুক্ত আইনজীবী। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্য, তুরস্ক, ডেনমার্ক সরকারের স্কলারশীপ সহ নরওয়ে, সুইডেন, জ়ার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২০২২ এ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য ভিসা পেয়েছেন। Brac, AK khan Group, Civil aviation সহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। কিছু শিক্ষার্থী সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ড ছাড়া কোন প্রাণীই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য যেমন রোগমুক্ত মেরুদন্ড দরকার তেমনি মানসম্পন্ন শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। এ শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী মানসম্পন্ন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক। সরকারি বেসরকারি বিতর্ক বাদ দিয়ে উচ্চ শিক্ষাকে মান সম্পন্ন করতে হবে।
মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে দেশের উত্তর পূর্ব জনপদে সিলেটে প্রতিষ্টিত হয়েছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এটি সিলেটের প্রথম মানসম্পন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেট বিভাগের মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এ বিশ্ববিদ্যালয়। দেখতে দেখতে প্রায় ২২ বছর অতিক্রম করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনলাইন সিস্টেম চালু করেছেন। আগামী দিনে এ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট বিভাগের উচ্চশিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে দেশে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনন্য প্রতিষ্টান হবে এটাই প্রত্যাশা।
ড. মোহাম্মদ আবু তাহের
লেখক, গবেষক ও ভিজিটিং প্রফেসর
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
মোবাইল-০১৭১১১৩৭২৯৮