ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায় নিলেন লিজ ট্রাস

অনলাইন ডেস্ক :

মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায় নিলেন পদত্যাগকারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এখান থেকে তিনি সরাসরি বাকিংহাম প্যালেসে যাবেন। সেখানে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন ট্রাস। এরপরই শুরু হবে নতুন প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছেন ট্রাস। তিনি বলেছেন, দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারা তার কাছে অনেক বড় সম্মানের বিষয় ছিল। বিদায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তা মোকাবিলায় সরকারকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এসময় উত্তরসূরী হিসেবে ঋষি সুনাকের প্রতি শুভকামনা জানান লিজ ট্রাস এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীর সফলতা কামনা করেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন। সবশেষে ট্রাস বলেন, আমরা একটি ঝড়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি যুক্তরাজ্যকে বিশ্বাস করি, ব্রিটিশ জনগণকে বিশ্বাস করি এবং আমি জানি যে, সামনে আরও উজ্জ্বল দিন অপেক্ষা করছে। ভাষণ শেষ করেই বাকিংহাম প্যালেসের দিকে রওয়ানা দেন লিজ ট্রাস। এ সময় সঙ্গে তার স্বামী ও দুই কন্যা ছিলেন। এর আগে, অর্থনৈতিক বিতর্কের জেরে গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রাস। তিনি বলেছেন, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন লিজ ট্রাস। মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। ট্রাসের চেয়ে কম সময়ে আর কোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়নি। যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সময় দায়িত্বপালনকারী প্রধানমন্ত্রী হলেন জর্জ ক্যানিং। ১৮২৭ সালে মারা যাওয়ার আগে মাত্র ১১৯ দিন এই পদে ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ডাউনিং স্ট্রিট থেকে দেওয়া ভাষণে ট্রাস বলেন, যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে পিছিয়ে ছিল এবং তিনি তার দলের সাহায্যে এটি পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি… যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তা দিতে পারবো না। একটি বিশাল অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতার মুহূর্তে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন লিজ ট্রাস। তার এই সমস্যার শুরু মূলত গত ২৩ সেপ্টেম্বর। সেদিন ট্রাস প্রশাসনের প্রথম অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং বিশাল ট্যাক্স ছাড় দিয়ে মিনি-বাজেট ঘোষণার পরপরই যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বাজারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দেয়। বিতর্কের মুখে গত ৩ অক্টোবর রেকর্ড ট্যাক্স ছাড়ের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটেন ট্রাস ও কোয়ার্টেং। কিন্তু তাতেও সমালোচনা থামেনি। শেষপর্যন্ত গত ১৪ অক্টোবর পদত্যাগ করেন কোয়ার্টেং। তার স্থলাভিষিক্ত হন আরেক কনজারভেটিভ নেতা জেরেমি হান্ট। দায়িত্ব পেয়েই তিনি কোয়ার্টেং, তথা লিজ ট্রাসের বেশিরভাগ পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। এছাড়া হাউজ অব কমন্সে ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে গত রাতের ভোটাভুটিতেও ব্যাপক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। এই বিতর্কের মধ্যেই পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান। ফলে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায় এবং শেষপর্যন্ত তিনিও সরকারপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। মাত্র ছয় সপ্তাহ ক্ষমতায় থাকলেও যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, বাকি জীবন তিনি সরকারি ভাতা পাবেন। জানা গেছে, বছরে ১ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড পাবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *