কাতার বিশ্বকাপে মরক্কো মিরাকল থামছেই না

অনলাইন ডেস্ক :

অবিশ্বাস্য-অকল্পনীয়, তবে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত নয়। কাতার বিশ্বকাপে চলছেই মরক্কো মিরাকল। গ্রুপপর্বে বেলজিয়াম বধ, এরপর রাউন্ড অব সিক্সটিনে স্পেন বিদায় নিয়েছিল মরোক্কান রূপকথায়। এরপর আফ্রিকার মুসলিম দেশটির প্রতি প্রত্যাশার পারদ এক ধাপে শতগুণ বেড়ে যায়। সমর্থকদের সেই প্রত্যাশার প্রতিদান কড়ায় গ-ায় বুঝিয়ে দিয়েছে মরক্কো। এবার তাদের শিকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। শনিবার রাতে আল থুমামা স্টেডিয়ামে ১-০ গোলে পর্তুগিজদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আফ্রিকার দেশটি। মরক্কোর হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন ইউসুফ এন-নেসিরি। আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সেমিতে উঠলো মরক্কো। এদিনও প্রথম একাদশে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে রাখেন কোচ ফের্নান্দো সান্তোস। প্রথম থেকেই আক্রমণে নামে পর্তুগাল। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে বক্সে ক্রস করার চেষ্টা করে তারা। ৪ মিনিটের মাথায় ব্রুনো ফের্নান্দেজের ফ্রিকিক থেকে দুরন্ত হেড করেন জোয়াও ফেলিক্স। তার হেড বাঁচিয়ে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। মাঝে মাঝে দুরন্ত আক্রমণ চালাচ্ছিল মরক্কোও। প্রান্ত ধরে কয়েকটি আক্রমণ করেছেন হাকিমি, জিয়েচরা। কিন্তু খুব একটা সমস্যায় পড়েননি পর্তুগালের গোলরক্ষক কোস্তা। ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে জোরালো শট মারেন ফেলিক্স। বল সরাসরি গোলের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোলের একটু উপর দিয়ে বল চলে যায়। ৪০ মিনিটে গোলের সুযোগ পায় পর্তুগাল। বাঁ দিক থেকে ক্রসে শট মারেন ফেলিক্স। কিন্তু তার শট বার উঁচিয়ে চলে যায়। ৪২ মিনিটে এগিয়ে যায় মরক্কো। নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাস খেলে বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠে মরক্কো। বক্সে বল ভাসিয়ে দেন বৌফাল। আগুয়ান গোলরক্ষক কোস্তা বলের নাগাল পাওয়ার আগে হেডে গোল করেন ইউসুফ এন-নেসিরি। পেগাল খাওয়ার পরে শোধ করার চেষ্টা করে পর্তুগাল। সুযোগও পায় তারা। বক্সের বাইরে থেকে ব্রুনো ফের্নান্দেজের শট বারে লেগে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে ০-১ গোলে পিছিয়ে সাজঘরে যায় পর্তুগাল। বিরতির পর ম্যাচের ৫০ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল মরক্কোর। ৪৯ মিনিটের মাথায় হাকিম জিয়েচের ফ্রিকিক আর একটু হলে জালে জড়িয়ে যেত। কোনো রকমে সেই বল বার করেন কস্তা। ৫২ মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন রোনালদো। এরপর একের পর আক্রমণ চালায় পর্তুগাল। বেশ কয়েক বার মরক্কোর বক্সে পৌঁছেও যান রোনালদোরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব আক্রমণ প্রতিহত হয়ে যায়। গোল না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন পর্তুগালের ফুটবলাররা। ম্যাচের ৮২ মিনিটে আবারও দারুণ সুযোগ পায় পর্তুগাল। রোনালদোর পাসে দারুণ শট নিয়েছিলেন ব্রুনো ফের্নান্দেজ। ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি ঠেকিয়ে দেন মরোক্কান গোলকিপার ইয়াসিন বুনো। ইনজুরি টাইমে গোল করার দারুণ সুযোগ পান রোনালদো। বক্সের মধ্যে থেকে তার ডান পায়ের শট বাঁচান বোনো। ৯২ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন মরক্কোর চেদিরা। ১০ জনে হয়ে যায় মরক্কো। তার পরেও গোল করতে পারেনি পর্তুগাল। একের পর এক আক্রমণ করেও শেষ পর্য কোনো গোল পাননি রোনালদো, ফের্নান্দেজরা। ০-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। প্রথম আরব দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠে মরক্কো। চলতি কাতার বিশ্বকাপে এখনও হারের স্বাদ পায়নি আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের কোলঘেঁষা উত্তর আফ্রিকার দেশটি। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে তারা ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। দ্বিতীয় ম্যাচে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় ফিফার বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেলজিয়ামকে। আর গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে হারায় কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইর দল। রাউন্ড অফ সিক্সটিনে স্পেনকে হারিয়ে কেয়ার্টারে যায় তারা। কোয়ার্টারে পর্তুগালকে বিদায় করে এবার তারা পা রাখলো সেমিতে। কতদূর যাবে এই মরক্কো মিরাকল- উত্তর মিলবে সেমিফাইনালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *