বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ভর্তুকি হিসাবে ৫৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উত্থাপিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে।

বৃহস্পতিবার সিপিডি অফিসে ‘খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি): পরিচ্ছন্ন জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না কেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি চাওয়ার সময় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায়।

তিনি বলেন, মোট প্রস্তাবিত অর্থের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, পেট্রোলিয়াম আমদানির জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ১৯ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা এবং পেট্রোবাংলার কাছে এলএনজি আমদানির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাবে আমরা একমত নই’।

তিনি আরও বলেন, বরং সরকারের উচিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমাতে বেশি ভাড়া এবং কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করতে একটি পরিকল্পনা নেয়া উচিত।

সিপিডি গবেষণা পরিচালক বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিপিসি এখন জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পরে পেট্রোলিয়াম ব্যবসায় লোকসানের পরিবর্তে প্রচুর মুনাফা করছে, কারণ বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে।

তিনি দাবি করেন, বিপিসি এখন প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি করে ৩০ টাকার ওপরে লাভ করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হতে পারে মূল্যস্ফীতির কারণে মন্ত্রণালয় এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি চেয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি)গ্রহণের জন্য সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এর কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে।

তিনি বলেন,‘কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা এই পদক্ষেপের প্রশংসা করি, কারণ এটি নবায়ণযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে আগের তুলনায় তারা (সরকার) অনেক বেশি মনোযোগ দিয়েছে।’

তিনি বলেন, তবে সরকার এখন ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসছে।

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিবৃতিতে একটি বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। কারণ তারা এখন লক্ষ্যমাত্রা ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি’র পরিবর্তে, ‘ক্লিন এনার্জি’ ‘৪০শতাংশ পর্যন্ত’ শব্দটি ব্যবহার করেছে।’

তিনি আরও বলেছেন, সরকার ‘কার্বন ক্যাপচার টেকনোলজি’ চালু করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ফেজ আউট পরিকল্পনা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব এখন এই প্রযুক্তি থেকে সরে আসছে। কারণ এই পদ্ধতিটি পরিবেশ বান্ধব নয়। কারণ এই ধরনের প্রযুক্তি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন ক্যাপচার করতে ব্যবহৃত হয়।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির খরচ কমছে এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ বা ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন সহজে বাস্তবায়নযোগ্য। কেননা অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি দিন দিন সস্তা হচ্ছে। সরকারের উচিত অপ্রমাণিত প্রযুক্তির পরিবর্তে এই বিষয়ে প্রমাণিত প্রযুক্তির দিকে যাওয়া।’

তিনি আরও লক্ষ্য করেছেন যে সরকার শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির উৎসাহিত করতে চায়, অন্যদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যথাযথ মনোযোগ পায়না।

তিনি বলেন,‘প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাদ দেয়া হয়নি, তবে এটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।’

—-ইউএনবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *