জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
স্থানীয় এক বেকারির শ্রমিক মো: কাইয়ুম মিয়া। কখনো বেকারির ভিতরেই থেকে যেতেন। কখনো ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে পাচজনের পরিবার নিয়ে এক কক্ষের ঘরে থাকতেন। নিজের জমি ঘর কিছুই ছিলো না। কোরবানি ঈদ আসলে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। তিনি বলেন, কেউ দিলে একটু খাইতে ফারতাম। ২০ বছর ধরি কলনিত এক রুমের ভাঙ্গা ঘরো থাকতাম। চারটা ডালভাত ছাড়া আর কোন কিছু খাওয়ার উপায় আসিল না।
তিনি বলেন, ”এখন আমারে আল্লাই ঘুরিয়া চাইছোইন। জমি দিসইন জমির উপর গর দিসইন। আবার কোরবানি ঈদো ইউএন স্যার গরুর গোষ্ত আনিয়া দিয়া খোজ নিসইন। জিগাইসইন আর কিছু লাগবো নি। কোরবানি ঈদো কেউ গরো মাংস পৌছাইয়া দেইন ইটা আমার লাগি জীবনে পরথম।”
কথায় আছে ”আল্লাই যারে দেইন তারে ছাপ্পর মাইরা দেইন। আমি ইউএন স্যাররে কইসি আর কিছু লাগতো নাই। গত দুই বছরে ওতো কিছু পাই গেলাম। আজীবন কাম করলেও তো একশতক জমি কিনতে পারতাম নাই। অথচ জমি ঘর রেডিমেইড পাইলাম। লগে ইউএন স্যার কয়েকদিন ফর ফর খবর নেইন। লগে ঈদোর দিন গোস্তও দিয়া গেলা। আল্লার গরো বারবার শুকরিয়া।
স্বামী পরিত্যাক্তা বিনা আক্তার বলেন, আমারে আমার স্বামী ছাড়িয়া যাওয়ার পর শ্রীমঙ্গলের কলনী ছাড়তে হলো। সেই সময় এক সন্তান সাথে নিয়ে শুধু অন্ধকার দেখতাম। ভাইয়ের বাড়িতেও জায়গা হয়নি।এতোই নিরুপায় হয়েছিলাম যে এখনো চিন্তা করলে ভয় লাগে। সেই সময় ঘর পেয়েছিলাম একটি। আলো দেখেছিলাম। আশ্রয়নে এসে একটু জায়গা পেয়েছিলাম। সেই জায়গায় সবজি লাগিয়ে দিনানিপাত করছি। আমার মতো কারো দুগতি না আসুক এটাই কামনা। এই নতুন ঘরে আসার পর ইউএনও স্যার প্রায় আসেন খোজখবর নেন। গতকাল ঈদের দিনে এসে দিয়ে গেলেন গরুর গোস্ত। আমার ছেলেটা দেখে কতযে খুশি হলো তা বুঝিয়ে বলতে পারবো না।
শুধু তারাই না আশ্রয়নের ঘরে এসে কোরবানি ঈদে গরুর গোস্ত পেয়ে উচ্ছসিত নিম্নবিত্ত এসব মানুষ এভাবেই ঈদ উদ্যাপন করেছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মোহাজিরাবাদ এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে নিজের পক্ষ থেকে এক কেজি করে গরুর গোস্ত বিতরন করেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এই মাংস প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজে বিতরন করেন ও তাদের খোজ খবর নেন।
আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ফারুক আহমেদ বলেন, ঈদের দিন ইউএনও সাহেবের পরিদশন ও বাড়ি বাড়ি যাওয়া সবাইকে আবেগাপ্লুত করেছে। আর সাথে সাথে ইউএনও স্যার প্রতি ঘরে ঘরে গোস্ত বিতরনের দৃশ্য সবাইকে মুদ্ধ করে। ফলে আশ্রয়নের ঘরগুলোতে ঈদের আনন্দ বেড়ে যায় কয়েকগুন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি রোজার সময়ই ব্যক্তিগত উদ্দোগে কিছু এলাকায় ইফতার সামগ্রী প্রতিদিন বিতরন করেছিলাম। পরে অনেকে আমার সাথে যুক্ত হয়। আমি এবার কোরবানি ঈদে বেগুনবাড়ি ও মোজাজিরাবাদের প্রতি পরিবারে এক কেজি করে মাংস বিতরন করেছি। কাজটা নিজের কাছেও ভালো লাগলো।