কবি মোহাম্মদ রফিক আর নেই

একুশে পদক বিজয়ী কবি ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিক রবিবার (৬ আগস্ট) রাতে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
সোমবার (৭ আগস্ট) বাগেরহাটে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করার কথা রয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কবি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। রবিবার রাত ৯টার দিকে বরিশাল থেকে ঢাকায় আনার পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তারা গণমাধ্যমকে জানান, তিন দিন আগে রফিক নিজ বাড়ি বাগেরহাটে যান। রবিবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে বরিশাল শহরের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরাতা ইউনিয়নের বাইতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি ঢাকার নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তবে, তিনি তারপর ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন।
সেখানে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। এটি তার সাহিত্যিক চেতনায় গভীর ছাপ ফেলে।
ঢাকা কলেজের পর রফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১ নম্বর সেক্টরে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন এবং তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেন।
স্বাধীনতার পর রফিক প্রথমে কলেজ শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংরেজি বিভাগে যোগদান করেন।
তিনি তার কবিতার মাধ্যমে সমাজের নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে তার রচিত ‘খোলা কবিতা’ শিরোনামের একটি কবিতা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ধুলোর সংসারে এই মাটি’, ‘কীর্তিনাশা’, ‘কপিলা’, ‘স্বদেশী নিঃশ্বাস তুমিময়’, ‘মৎস্যগন্ধা’, ‘বিশখালীর সন্ধ্যা’, ‘কালাপানি’ ও ‘ত্রয়ী’।
সাহিত্যে তার অসামান্য অবদানের জন্য কবি মোহাম্মদ রফিক ২০১০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
তার অন্যান্য স্বীকৃতি ও পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার এবং জেমকন সাহিত্য পুরস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *