হতাশা থেকে স্বপ্ন পূরনের পথে কুলাউড়ার সাকুল মিয়া 

আশরাফুল ইসলাম জুয়েল: অতি হতাশা হতে কি করে স্বপ্ন পূরণ করা যায় তা প্রমান করেছেন সাকুল মিয়া। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের একটি অজপাড়া  গ্রামের বাসিন্দা সাকুল মিয়া । এই গ্রামের অধিবাসিদের মধ্যে অধিকাংশই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন যাদের একজন সাকুল মিয়া (৪৭) ।   পরিবারের ৪ জন সদস্য নিয়ে তার সংসার। বাবার রেখে যাওয়া ১৮ শতক বসতভিটা ও এক খন্ড অনাবাদী জমি যা অধিকাংশ সময়ে অতি পানি অতি খড়ার কারণে পতিত থাকে। সংসার ছোট হলে কি হবে আয় রোজগার না ” থাকলে অভাব যেন কোন ভাবেই পিছু ছাড়ে না ।এমতাবস্থায় কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না সাকুল মিয়া। তারপর কিছু টাকা ধার  দেনা করে গ্রামের বাজারে একটি ভূষি মালের দোকান দেয় তা থেকে মাসে আয় হত ৫-৬ হাজার  টাকা। এত কম অর্থে সংসার চালানো দুবিষহ দু:সাধ্য  হয়ে পরে। এমতাবস্থায় আর কিছু না পেয়ে  স্থানীয় হীড বাংলাদেশ থেকে  ক্ষুদ্রঋণ  নিয়ে  একজন সফল  উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান । পরামর্শ মোতাবেক -সাকুল মিয়ার স্ত্রী ভাটেরা শাখার পুস্পিতা মহিলা সমিতিতে  সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সহায়তায় লেয়ার মুরগি পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করেন। পরবরর্তীতে  তিনি ৬০হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি খামার তৈরী করেন।  মুরগির একদিনের ৫০০টি  বাচ্চা ঔষধ, ভ্যকসিন ক্রয় করেন।

তার পর তিনি হীড বাংলাদেশ হতে লেয়ার মুরগি প্রদর্শনীর জন্য ১১,০০০ টাকা অনুদান পান । ঠিক তখনোই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। তিনি খামারে মুরগির নিয়মিত, খাদ্য, টিকা প্রদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও অন্যান্য পরিচর্যা ঠিক সময় যত্ন করেন। তাছাড়া সরকারী প্রাণিসম্পদ অফিসের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন । এভাবে টানা ৫মাস  পরিশ্রমের পর ফলাফল লক্ষ্য করেন। তার ৫০০ টি মুরগি থেকে ডিমের পাড়তে শুরু করে এবং ডিমের সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকে। সাকুল মিয়া তার খামারের আর ব্যয়ের হিসাব দিতে গিয়ে বলেন ৫০০টি লেয়ার মুরগি খামার করতে এখন পর্যন্ত তার-৩,২০,০০০ – ৩,৫০,০০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন তার ৫০০ টি মুরগি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০- ৪৬০ টি ডিম পান । প্রতিটি ডিম গড়ে ১৩-১৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি আরও আনন্দের অহিত বলেন শুধু ডিম থেকে নয় খামারের মুরগির জৈব সার হিসেবে এই এলাকায় কৃষকের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তার নিজের আমারে উৎপাদিত ডিম সে নিজের ভূষিমালের দোকানে বিক্রি করেন তাই কোন পইকার বা ফরিয়াদের কাছে ছটতে হয় না এখন তার বাস্তবায়িত প্রদর্শনী হতে প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ হয় । তিনি বলেন যে এই লেয়ার খামারের পাশাপাশি তিনি একটি নতুন সেড তৈরি করেছেন। এখন তিনি ছেলে মেয়ে নিয়ে বেশ সুখী, হতাশা চলে গেছে। তিনি বলেন যে তার খামার টেকসই ও  লাভজনক করার জন্য পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে পরিচালিত হীড বাংলাদেশর সমন্বিত কৃষি ইউনিট একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। সাকুলের কলা-কৌশল ও সাফল্য দেখে তার কয়েকজন প্রতিবেশী স্বউদ্যোগে আধুনিক টেকসই পদ্ধতিতে লেয়ার মুরগি পালন শুরু করেছে। কুলাউড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত  প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা নিবাস চন্দ্র পাল বলেন , সরকাররের পাশাপাশি পানিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়নে বিভিন্ন এনজিও কাজ করে যাচ্ছেন তার মধ্যে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে হীড বাংলাদেশের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কাজ সত্যি প্রসংশনীয় । হীড বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বর্মেন্দ্র সিনহা বলেন, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে পরিচালিত হীড বাংলাদেশর সমন্বিত কৃষি ইউনিট অত্র এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে সফলতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *