নিম্নমানের হেলমেটে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

ডেস্ক রিপোর্ট: মোটর সাইকেল চালক-আরোহীরা নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার করেন। দুর্ঘটনার সময়ে একটি হেলমেট একজন বাইকারের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ইদানীং দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাইকার শুধু পুলিশের মামলা থেকে বাঁচতে হেলমেট ব্যবহার করেন। এ দিকে আইনে হেলমেটের গুণগত মানের (কোয়ালিটি) কথা উল্লেখ না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ। এ কারণে অনেকেই নামমাত্র দামে খুবই নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করেন। বিশেষ করে বাইকাররা পিলিয়ন প্লাস্টিকের ক্যাপের মতো হেলমেট ব্যবহার করেন, যা আরোহীদের জন্য নিরাপত্তার চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেশি। সম্প্রতি ‘আমদানি নীতি’ আদেশে সার্টিফাইড হেলমেটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসটিআইয়ের এক কর্মকর্তা। মোটর সাইকেল চালকরা জানান, আরোহীদের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহারে আইন করা হলেও পুলিশের মামলা থেকে রেহাই পেতে তারা এ ধরনের হেলমেট ব্যবহার করেন। বাতিল হতে পারে ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি সড়ক পরিবহণ আইন অনুযায়ী মোটর সাইকেলে যাত্রী থাকলে চালকসহ দুজনকেই হেলমেট পরতে হবে। এ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপের পর মোটরবাইক রাইডারদের অতিরিক্ত হেলমেট বহন করতে দেখা যায়। যদিও একটা সময় মোটর সাইকেল আরোহীরা হেলমেট ব্যবহার করতেন না। তবে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহণ আইনে ‘কারাদন্ড’ ও ‘জরিমানা’ বিধান রাখার ফলে দুই-তিন বছর ধরে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। চালক ও আরোহীদের বেশির ভাগই এখন হেলমেট পরছেন। সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮-এর ৯২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘মোটরযান চলাচলের সময় হেলমেট ব্যবহার না করলে তিন মাসের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।’ তবে হেলমেট ব্যবহার না করলে আইনে একাধিক শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে শুধু জরিমানা করা হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া আইনে হেলমেট ব্যবহার না করার বিষয়ে জরিমানার বিধান থাকলেও মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফলে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারে অনীহা চালকদের। আইনে কিছু বলা না থাকায় চালকরা সুযোগ বুঝে অজুহাত দেখাচ্ছেন। বিআরটিএ রোড সেইফটি শাখার পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘হেলমেট মানে স্টান্ডার্ড হেলমেট। যারা সড়কে স্টান্ডার্ড হেলমেট ছাড়া বের হয়, আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্টান্ডার্ড হেলমেট নিশ্চিত করবে বিএসটিআই, তাও যত দূর সম্ভব নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার বন্ধ করার জন্য বাইকারদের সচেতন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ঢাকা শহরের বাইকাররা যথেষ্ট ভালো হেলমেট ব্যবহার করেন। আগে তো কেউই হেলমেট ব্যবহার করতেন না, আমাদের মোবাইল কোর্ট ও ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে এখন সবাই হেলমেট ব্যবহার করছেন। বর্তমানে আমরা এই স্টান্ডার্ড হেলমেট নিশ্চিত করতে সবাই কাজ করছি।’ সার্টিফাইড হেলমেটের বিষয়ে বিএসটিআই’র উপপরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, সম্প্রতি আমদানি নীতি আদেশে সার্টিফাইড হেলমেটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু হেলমেট বিদেশ থেকে ইমপোর্ট হয়, কাস্টমস থেকে হেলমেট সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেওয়ার পরে কেবলমাত্র মানসম্পন্ন হেলমেট দেশে প্রবেশ করতে পারবে। নিম্নমানের হেলমেট প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও জানান, ইতোপূর্বে যে সব হেলমেট নিম্নমানের, বিশেষ করে উবার বা পাঠাও রাইডে ব্যবহারের জন্য চালকরা কম দামের যে হেলমেটগুলো কিনেছে তাদের আমরা উদ্বুদ্ধ করছি এই ধরনের হেলমেট ব্যবহার না করতে। নিজেদের স্বার্থে তাদের অনিরাপদ হেলমেটগুলো পরিহার করতে বলা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আমরা সেগুলো জব্দ করব, তবে এ ব্যাপারে আপতত তাদের সচেতন করা হচ্ছে। রিয়াজুল হক বলেন, এখন আর এ ধরনের নিম্নমানের হেলমেট আমদানির কোনো সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে যে নিম্নমানের হেলমেটগুলো আমদানি করা হয়েছে, তা আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিক্রি বন্ধ করছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, দেশের ২টা প্রতিষ্ঠান হেলমেট প্রস্তুতের জন্য বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স নিয়েছে। তবে তারাও যদি নিম্নমানের হেলমেট প্রস্তুত করে তাদেরটাও জব্দ করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, আইনে হেলমেট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোয়ালিটির কোনো কথা উল্লেখ করা হয়নি। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি কী ধরনের হেলমেট পরিধান করতে হবে। দেখা যায় বেশির ভাগ মোটর সাইকেল চালক যে হেলমেট ব্যবহার করছেন পেছনের আরোহীর হেলমেট তার থেকে নিম্নমানের হয়ে থাকে। এগুলো অবশ্যই অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হেলমেট। সেক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আইন থাকলে নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করলে আইনের আওতায় আনা যেত। আইনে না থাকলে জরিমানার বিষয়টা প্রযোজ্য হয় না। রাজধানীর বাংলা মোটরের এক ব্যবসায়ী জানান, ভোক্তাদের চাহিদার জন্য নিম্নমানের হেলমেট বিক্রি করতে হয়। বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং চালকরা নিজেদের জন্য ভালোটা কিনলেও যাত্রীর জন্য কম দামের ক্যাপ হেলমেট কেনেন। এগুলোর দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা মাত্র। দৈনিক ২৫ থেকে ৩০টি ক্যাপ হেলমেট বিক্রি হচ্ছে তাদের দোকানে। অন্যদিকে বিদেশি হেলমেট বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫টি। এ বিষয়ে রাইড শেয়ারিং বাইক চালকরা বলেন, ভালো   মানের এবং নিরাপদ হেলমেট যাত্রীদের দিলে পরতে চান না। কারণ একাধিক যাত্রী ব্যবহার করায় ওগুলো ঘেমে যায়। তাই বাধ্য হয়েই টুপির মতো হালকা হেলমেট ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর যেকোনো ধরনের হেলমেট ব্যবহার করলেই তারা জরিমানা থেকে বাঁচতে পারেন বলে জানান তারা। নিয়মিত রাইড শেয়ারিং করা কয়েকজন যাত্রী জানান, বেশির ভাগ রাইডার তাদের ক্যাপের মতো হেলমেট দিয়ে থাকেন। এসব হেলমেটের ফিতা লুজ থাকে, কোনোমতে পেঁচিয়ে পরিধান করতে হয়। আবার বাইক চলার সময় জোরে বাতাসে মাথা থেকে সরে পেছনে চলে যায়। অনেকে আবার বড় হেলমেট দেয়, তবে সেগুলো থাকে ব্যবহারে অনুপোযোগী, মানে রাইডারদের ব্যবহৃত পুরনো হেলমেট। রাইডাররা স্টান্ডার্ড হেলমেট না দিলে যাত্রীদের কিছু করার থাকে না। রাজধানীতে বেশির ভাগ ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল আরোহীদের এমন নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। পক্ষান্তরে যারা ব্যক্তিগত বাইকে চলাচল করেন তাদের পেছনে যিনি বসেন তাকেও দেখা যায় স্টান্ডার্ড সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করতে। তারা ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা থেকে নিজেদের নিরপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেন। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপদ সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহারে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন বাইক চালকদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তাই মামলা বা জরিমানা নয়, নিরাপত্তার জন্যই বাইকারদের নিম্নমানের হেলমেট পরিহার করে সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *