সম্প্রতি ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং পুঞ্জির লোকদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহি উদ্দিন ও সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদনানের সাথে সাক্ষাৎ করে ঝিমাই চা-বাগান কর্তৃক রাস্তায় গাড়ি চলাচলের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনা করেন। পরে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদনানের নেতৃত্বে সেনা সদস্যের একটি দল ঝিমাই চা-বাগান ও ঝিমাই পুঞ্জি পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ঝিমাই পুঞ্জির লোকজন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গাড়ী নিয়ে চলাচল করতে পারতো না ঝিমাই চা-বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তা দিয়ে। বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই রাস্তার মধ্যখানে ফটক দিয়ে রাখে এবং সর্বসাধারণের গাড়ি নিয়ে চলাচল বন্ধ রাখে। সেই ফটক দিয়ে পুঞ্জির লোকজন, শিক্ষার্থীরা গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন না। যার কারণে ওই ফটক থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তাদের পুঞ্জিতে যাতায়াত করতে হত। ইতিমধ্যে রাস্তা চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ খাসিয়াদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ঝিমাই পুঞ্জিতে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। এরআগেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, ড. মিজানুর রহমানসহ দেশের সুশীল সমাজের অনেকেই পরিদর্শনে আসেন। তারা পুঞ্জির লোকদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে কথা বলেন।
ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে আসা পান ব্যবসায়ী সুধাংশু দাস ও কুলাউড়ার মনসুর গ্রামের আব্দুল মন্নান বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঝিমাই পুঞ্জি থেকে পান ক্রয় করে ব্যবসা করে আসছি। গত ১৫ বছর ধরে বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তায় ফটকে বাঁধা থাকার কারণে পান পরিবহন করতে খুবই কষ্ট হতো। নির্দিষ্ট সময়ের আগে পান বাজারে সরবরাহ না করার কারণে অনেক সময় আমাদের পান নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে রাস্তায় গাড়ি চলাচল উন্মুক্ত করায় আমরা পান ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। বাগান কর্তৃক যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তা মানবিক দিক বিবেচনা করে আরো কিছুটা সময় বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
ঝিমাই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা পুঞ্জির লোকদের বলেছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাগানের রাস্তা দিয়ে তারা শুধুমাত্র পান পরিবহনের জন্য একটি গাড়ি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। আর সকালে তাদের চলাচলের জন্য রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারবে। তবে সন্ধ্যার পর বাগানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গাড়ি চলাচলে বাগানের নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, কেদারপুর টি কোম্পানি লিমিটেড ১৯৬৮ সালে ৬৬১.৫৫ একর বিশিষ্ট ঝিমাই চা-বাগানটি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেয়। বন্দোবস্ত নেওয়ার পর ৩১০ একর ভূমিতে চা-গাছ লাগানো হয়েছে। বাকি ভূমির মধ্যে প্রায় ৫ একরে রয়েছে বাগানের অফিস, ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে। আগামী ২০৫২ সাল পর্যন্ত বাগানটি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া। প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন করসহ সরকারকে সকল রাজস্ব দিয়ে আসছে বাগান কর্তৃপক্ষ। বাগানের লিজ নেওয়া ৩৭১ একর ভূমি দখল করে খাসিয়ারা পরিবার পান চাষ ও বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস করছে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত পুঞ্জির লোকদের সাথে বাগানের সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। এরপর বাগান সম্প্রসারণ করতে গেলে পুঞ্জির লোকজন বাঁধা দিলে বাগানের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।