আল্লাহ জালিমদের ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না-কুলাউড়ায় ডাঃ শফিকুর রহমান

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, এ দেশ সিকিম, ভুটান নয়, এটা ১৮ কোটি জনগণের সম্প্রীতির বাংলাদেশ। এখানে কারও জমিদারি চলবে না। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে। কোন অপশক্তি সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারবেনা। সংখ্যা গুরু সংখ্যালঘু বলে জাতিকে বিভক্ত করা যাবেনা। আমরা সকলে মিলে এ দেশটাকে নতুন করে গড়ে তুলব। ২৪ আগস্ট শনিবার দুপুরে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নে বন্যার্ত মানুষের মাঝে উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।

ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নদীর মধ্যে বাঁধ দেওয়া অন্যায়। বাঁধ দিয়ে তারা (ভারত) শুকনো মৌসুমে পানি আটকিয়ে রেখে সুবিধা নেয়, আবার বর্ষার সময় পানি জমিয়ে একসাথে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়। এটা চলতে দেওয়া হবে না। সৎসুলভ প্রতিবেশি হিসেবে আমরা তাদের কাছে এটি আশা করি না।’ সৃষ্ট বন্যার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও দায় আছে। আর্ন্তজাতিক আদালতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনে যাওয়া হবে।

তিনি বলেন, বছর বছর আমাদের নদীর এই বাঁধ ভাঙ্গে কেন, চোর-ডাকাত-প্রতারকদের কারণে ভাঙ্গে। জনগণের কষ্টের ট্যাক্সের টাকা নদী শাসন রক্ষার জন্য দেয়া হয়। কিন্ত সঠিকভাবে কাজ না করে ডাকাতদের পকেটে বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা চলে যায়। এ কারণে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঠিকমত দেয়া হয়না। উপরের ডাকাতনি থেকে শুরু করে নিচের সমস্ত ডাকাত পর্যন্ত একটা চেইন সিন্ডিকেট ছিল। যার কারণে বছরে বছরে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা হলে জনগণের কপালে প্রতিবছর দুর্ভোগ আসে। যদি নদী খনন ও বাঁধ নির্মাণ ঠিকমত করা হত তাহলে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হত না। যার কারণে মানুষের জানমালের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ৫ আগষ্ট হিমালয় পর্বত কিভাবে ধসে পড়ল, কিভাবে পরিবর্তন হলো। আমরা বলি আল্লাহর ইচ্ছায় সবকিছু সম্ভব হয়েছে। আওয়ামীলীগের লম্পট মন্ত্রী এমপি এতো কুকর্ম করেছে যে, তারা এখন বন জঙ্গলেও আশ্রয় পাচ্ছেনা, এখন খালে বিলে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাচ্ছেনা। মানুষ জাল দিয়ে যেভাবে মাছ ধরে সেই সমস্ত দুস্কৃতিকারীদের এখন পলো দিয়ে ধরা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের অনেকের পাপের বিচার শুরু হয়েছে। আগামীতেও আরও হবে। আল্লাহ জালিমদের ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।

তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৫ আগস্ট জালিম সরকার বিদায় নিয়েছে। আমরা এখন দেশটাকে গঠন করব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহযোগীতা করব। ‘গত সাড়ে ১৫ বছর একটি দলের ওপর যে রকম জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে, সে জুলুম বাংলাদেশের অন্য কোনো দলের ওপর করা হয়নি। সে দলটার নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই দলের দায়িত্বশীল শীর্ষ ১১ জন নেতাকে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রলীগ ও পুলিশ অতীতে যা করেছে তার জন্য তারা শিক্ষা পাচ্ছে। পুলিশ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য লীগ দিয়ে জালিম আওয়ামী সরকার সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের উপরে। তাদের পতনও হয়েছে সেভাবে। আমাদের দলের নেতৃবৃন্দের ব্যবসা প্রতিষ্টান বাসা বাড়ি লুটপাট করেছে এবং বোল্ডোজার দিয়ে ভেঙ্গে চুরমার করেছে। এরপরেও আপনারা কোন প্রতিশোধ প্রতিহিংসা করবেন না। আমরা কারো ওপর প্রতিশোধ নেব না। এক জলুম তন্ত্রের পরে আরেক জুলুমতন্ত্র চাই না।

তিনি বলেন, আমার জন্মমাটি কুলাউড়া আজ ভাল নেই। সবকিছু পানির নীচে। মৃত মানুষের দাফনের কোন জায়গা নেই। সব দিকে পানি আর পানি। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটাবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া এবং ঢাকায় হিন্দু বৌদ্ব খিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাথে বৈঠকের কারণে কুলাউড়ায় বন্যা দূর্গতের খোঁজখবর নিতে দেরীতে আসায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে বন্যার্ত মানুষের মাঝে উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপজেলা জামায়াতের আমীর মোঃ আব্দুল হামিদ খানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির ফখরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, নায়েবে আমির মাও. আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী, সাবেক জেলা আমীর আব্দুল মান্নান, জেলা সহ সেক্রেটারী আলাউদ্দিন শাহ, মৌলভীবাজার পৌর জামায়াতের আমীর তাজুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলা আমীর এমাদুল ইসলাম, জুড়ী উপজেলা আমীর হাফেজ নাজমুল ইসলাম, ছাত্র শিবিরের জেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সুমন, সেক্রেটারী নিজাম উদ্দিন, সাবেক জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন, পৌর সভাপতি রুহুল আমিন ও সেক্রেটারী মনসুর আহমদ তালুকদার, ছাত্র শিবিরের কুলাউড়ার সভাপতি ফয়ছল আহমদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৫ বছর প্রকাশ্য নিজ জন্মমাটি কুলাউড়ায় কোন সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান। ২০০১ সালে জোট সরকারের আমলে ডাঃ শফিকুর রহমান দাড়িপ্লালা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *