কুলাউড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে রোহিঙ্গা জন্মসনদ প্রদানের অভিযোগ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ এর স্বাক্ষর জাল করে রোহিঙ্গা জন্মসনদ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের সাবেক উদোক্তা বিরজিত দেবনাথের কারসাজিতে এই কাজটি করা হয়েছে বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ। এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ প্রদানের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল গত ৩০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি লিখিত আকারে অবহিত করেন।

জানা যায়, চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স গত ৫ আগষ্ট থেকে আত্মগোপনে থাকার কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর জানতে পারেন চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে জন্মসনদ প্রদান করেছেন। জন্মনিবন্ধন রেজিষ্টার খোঁজে তিনি এর প্রমানও পান। গত জানুয়ারি মাসে ২ জন সন্দেহজনক ব্যক্তির নাম রেজিষ্টারভুক্ত করা হয়। তাদের একজন হলো কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার পাতাবাড়ি হোল্ডিং নং ২৫ এর সৌমিক বড়ুয়া, পিতার নাম- সন্তোষ বড়ুয়া, মাতার নাম- মনজু বড়ুয়া, জন্মনিবন্ধন নং ২০০৮৫৮১৬৫৩৫৫০৪৬৬০৬ জন্ম তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০০৮, জন্মনিবন্ধন রেজিষ্ট্রেশন ও ইস্যুর তারিখ ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ এবং অন্যজন হলো টেকনাফ উপজেলার হৃীলা ইউনিয়নের হৃীলা বাজারের ফৌজিয়া লাল মোহাম্মদ। যার পিতার নাম লাল মোহাম্মদ ও মাতার নাম হাজেরা খানম। যার জন্মনিবন্ধন নং ১৯৮৮৫৮১৬৫৩৫০৪৭২৯৩ জন্ম তারিখ ১০ জুলাই ১৯৮৮ এবং জন্মনিবন্ধন রেজিষ্ট্রেশন ও ইস্যুর তারিখ ০৪ মার্চ ২০২৪।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের সাবেক উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকে অব্যাহতির জন্য গত ২০২২ সালের ১৯ জুন চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ডিএফ মোহাম্মদ শাহ আলম অভিযোগটি তদন্ত করেন। ওইসময় তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সচিবের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং জন্মনিবন্ধন সনদে ইউপি সচিবের ইংরেজী স্বাক্ষর জাল পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে হাজীপুর ইউনিয়নের উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথের বিরুদ্ধে অসততা, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অতিরিক্ত টাকা দাবী বা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মল্লিকা দে স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত ও বিতর্কিত উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথকে বাদ দিয়ে তার কাছ থেকে সরকারি সম্পত্তি (হার্ডডিস্কসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী) উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নতুন উদ্যোক্তা নিয়োগ দেবার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল জানান, জন্মনিবন্ধন রেজিষ্টারে দুইজন রোহিঙ্গাকে অবৈধ রেজিষ্ট্রেশনের প্রমান মিলে। তদন্ত করলে আরো রোহিঙ্গা জন্মসনদ বের হতে পারে। অবৈধভাবে জন্মসনদ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এখন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে পরে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে দেবে।

ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সাবেক উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। চেয়ারম্যানের সাথে আমার পূর্ব বিরোধ থাকায় তিনি এসব অভিযোগ তুলেছেন। জন্মসনদ সার্ভারে রেজিস্ট্রার করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কি করতে পারবে।

হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইউনিয়নের সাবেক উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথ কারসাজি করে আমার ও সচিবের স্বাক্ষর স্ক্যান করে ফাঁসানোর জন্য ওই জন্মসনদ তৈরি করেছে। ২০২২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে জন্মসনদ কারসাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে তাকে অব্যাহতির জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করি। সেই অভিযোগের তদন্ত সত্যতা পাওয়ায় উপ-পরিচালক মল্লিকা দে স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বিরজিতকে উদ্যোক্তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন বলেন, অফিসিয়ালি অভিযোগ পাইনি। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফোনে বিষয়টি অবহিত করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *