শাওনকে কিভাবে প্রেম নিবেদন করেছিলেন হুমায়ূন?

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। আজ তার ৭৬তম জন্মদিন। এদিনটি ঘিরে ভক্ত, শুভাকাঙ্খীরা স্মরণ করেন তাকে। এদিকে দিনটি তার দ্বিতীয় স্ত্রীসহ আর কাছের মানুষদের জন্য বেদনারও। এদিকে জন্মদিনে সামনে এসেছে আরেকটি বিষয়। সেটি হলো তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন কিভাবে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং বিয়ে করেন। ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন তার মেয়ের বান্ধবী। তারও আগে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিচিতি পান শিশুশিল্পী হিসেবে। জনপ্রিয় এ ব্যক্তিত্ব একাধারে নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী, সঙ্গীতশিল্পী, পরিচালক ও স্থপতি। মেহের আফরোজ শাওনকে কিভাবে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ? এই বিষয় নিয়ে অভিনেত্রী নিজেই একটি সংবাদমাধ্যকে বলেছিলেন। শাওন বলেন, ‘‘ভালোবাসা নিবেদনে ‘উনি আমাকে বলেছিলেন, ‘গুহাচিত্র যারা আঁকতেন তাদেরও কাউকে লাগত ওই অন্ধকারে প্রদীপটা ধরে রাখার জন্য। যাতে সেই চিত্রকর নিজের কাজটা করতে পারেন সুন্দরভাবে। তুমি কি আমার জন্য সেই আলোটা ধরবে?’’ এই কথা শোনার পর মেহের আফরোজ শাওনের পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যায়। নিশ্চুপ হয়ে যান কিছু দিনের জন্য। কোনো কথা বলেননি প্রিয় মানুষের সঙ্গে। তবে সে প্রসঙ্গ না উঠিয়ে লেখক আবার কিছুদিন পর শাওনকে বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যদি একা চলে যাই, সব ছেড়ে? তুমি থাকবে?’ এ কথা শুনে এবার আর নিস্তব্ধ থাকেননি অভিনেত্রী। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘থাকব এবং সবসময় থাকব।

বিয়ে কিংবা তাদের প্রেমের গুঞ্জন ওঠার পর বেশ আলোচিত হয় এই সম্পর্ক। নেটিজেনরা বলেছিলেন মেয়ের বান্ধবীকেই বিয়ে করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। এমন একটি কথা এখনও অবশ্য প্রচলিত আছে। তবে এ বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে শাওন বলেন, ‘বান্ধবীর বাবার সঙ্গে প্রেম করিনি বরং বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের কন্যা শীলা আহমেদ আমার বন্ধুর মেয়ে।’

হুমায়ূন আহমেদ ও শাওন

এদিকে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জন্মদিনের কেক কেটে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালন করেছেন। আজ সকালে নুহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত। পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার ছেলে নিনিত ও শাওনের বাবা মোহাম্মদ আলী নুহাশপল্লী আসেন।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ছায়া সুনিবিড় প্রত্যন্ত কুতুবপুর গ্রামে বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের কোলে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থানের বিভিন্ন এলাকার নাম বারবার তার লেখার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। ছেলেবেলায় তার ডাক নাম ছিল কাজল। তার পুলিশ কর্মকর্তা বাবাও একজন লেখক ছিলেন। জনপ্রিয় দুই লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তার ছোট দুই ভাই।

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, চিত্রনাট্য লেখক, নাট্যনির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রবন্ধকার ইত্যদি। সাহিত্যের সব জায়গায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। কখনও আবার রংতুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছেন ক্যানভাসের রঙহীন সাদা স্থান। পিছিয়ে ছিলেন না নির্মাণেও। ছোটপর্দা, বড়পর্দায় তার নানান সৃষ্টি বাঙালির মনে দাগ কেটে থাকবে হাজার বছর।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণে করেন। পরে ২৪ জুলাই তাকে নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *