শংকর দুলাল দেব : রাজনগরে নদী শাসনের নামে বন্যা পরবর্তী দুর্গত এলাকার কৃষকদের সর্বনাশ করা হচ্ছে। উপজেলার খাস প্রেমনগর এলাকায় মনু নদীতে ড্রেজার মেশিন ও ভেকু দিয়ে উত্তোলন করা বালু ফেলে দরিদ্র কৃষকদের প্রায় ২শ বিঘা জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, রাজনগর উপজেলার মনু তীরবর্তী খাস প্রেমনগর এলাকায় এসএম নুরুজ্জামানের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান “এন জামান এন্ড কোম্পানীর” লোকজন মনু নদী থেকে ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করে বন্যা দুর্গত দরিদ্র কৃষকদের আবাদকৃত প্রায় ২শ বিঘা জমির সবজি ক্ষেতের মাচা ভেঙ্গে বালু স্তুপ করে রেখেছেন। দরিদ্র কৃষকরা সবজি ক্ষেত নষ্ট না করতে ঠিকাদারের লোকজন, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ জানালেও কোন কাজ হয়নি। বরং ঠিকাদারের লোকজন কৃষকদের নানারকম হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, এবছর ৩য় দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। তারা চড়া সুদে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সবজি উৎপাদন করেন। ফলনও বেশ ভাল হয়েছিল। হঠাৎ কোন ঘোষনা বা নোটিশ ছাড়া মনু নদী শাসনে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান “এন জামান এন্ড কোম্পানীর” লোকজন মনু নদী থেকে ড্রেজার ও একাধিক ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করে এলাকার কৃষকদের আবাদকৃত সবজি ক্ষেতের উপর রাখতে শুরু করে। এতে কৃষকরা প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়। নিরুপায় কৃষকরা কোন উপায় নাপেয়ে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানাযায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মনে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি আচ করতে পেরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১১০জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণ বাবৎ ২৫ হাজার টাকা দিলে কৃষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এবছর সবজির চাহিদা ও বাজার মূল্য ভাল হওয়ায় মনু তীরবর্তী খাসপ্রেমনগর এলাকার ১১০ জন কৃষক প্রায় ২শ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, লাউ, সিম, আলু, মরিচ সহ বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করেন। ২শ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করতে বিঘাপ্রতি তাদের গড়ে ২৫ হাজার করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে কৃষকরা দাবি করেন।
কৃষক মোঃ নূরুল ইসলাম (৪৪) জানান, ৩য় দফা বন্যা পরবর্তী দরিদ্র কৃষকরা বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে প্রায় ২শ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজি আবাদ করেন। এতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু নিমেষেই তাদের সব শেষ করে দেয়া হয়েছে। এসময় তার সাথে থাকা কৃষক সুন্দর মিয়া (৬৭), আনুর মিয়া (৫৫) সহ উপস্থিত কৃষকরা একমত পোষন করেন
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বালু স্তুপ করার জাগা পাউবো দেখিয়ে দিয়েছে। এতে তাদের কিছু করার নেই। তবে সবজি ক্ষেত কিছুটা নষ্ট হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল জানান, পাউবো’র জাগাতেই বালু রাখা হচ্ছে। যা জেলা প্রশাসকের অফিস জড়িপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করেছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। তবে বালু সরিয়ে নেয়া হবে বলে তিনি জানান।