কুলাউড়ার এনসি স্কুলের ১১৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নতুন-পুরোনোদের মিলনমেলা

মাহফুজ শাকিল: কুলাউড়ায় ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বিদ্যাপীঠ নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১৬ বছর পূর্তি উৎসব ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠানের শুরুতে কুলাউড়া ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে আনন্দ র‌্যালীর উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। র‌্যালীতে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। র‌্যালীটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। সকাল সাড়ে এগারোটায় বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। এসময় উদযাপন পরিষদের আহবায়ক মো. এনামুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম মিন্টুর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিল্পপতি, ইস্টকোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের এসএসসি ১৯৭০ ব্যাচের ছাত্র আজম জে চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজম জে চৌধুরী বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে বর্তমান আয়োজক কমিটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ১১৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের অনেক পুরনো বন্ধু ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাচের নবীন-প্রবীণদের সাথে দেখা হয়েছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। বিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন

oplus_0

ভবন বানালেই ও প্রযুক্তি আসলেই একটা বিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ স্থানে থাকেনা। সেটার জন্য প্রথম যেটা দরকার সেটা টাকার প্রয়োজন পড়েনা। স্কুলকে পরিচ্ছন্ন রাখুন, সব ছাত্র-ছাত্রী নিজেরা স্কুলকে পরিস্কার রাখুন। আর বেশি করে গাছ লাগান, যাতে স্কুলটি দেখে সত্যিকার অর্থে মনে হয় একটি ভালো পরিবেশে আছে। বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, বিদ্যালয়ের আগেরকার দিনের শিক্ষকরা আমাদের সঠিকভাবে পড়ালেখা করানোর কারণে দেশের সব জায়গায় প্রাক্তণ ছাত্ররা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কৃতকার্যতার সাথে কাজ করছেন। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী যারা এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে, তারা আমাদের আবেগ ও ভালোলাগার স্কুলের ঐতিহ্য ও সম্মান বৃদ্ধি করবে বলে আশাবাদী।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) কামরুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন, নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমির হোসেনসহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।

oplus_0

সরেজমিনে শনিবার দুপুরে দেখা যায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের ভেতরের মাঠে তৈরি করা ফটোমঞ্চে ব্যাচ ভিত্তিক গ্রুপ ফটোসেশনে বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ এর সাথে ছবি তুলেন বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদেরকে ব্যাপক আনন্দ, করতে দেখা যায়। বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নবীণ ও প্রবীণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন না দেখা সহপাঠিদের পেয়ে আনন্দ আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে কুশলাদি করেন। ১১৬ বছর পূর্তি উৎসবে আসা শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তারা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফিরে যান উচ্ছল তারুণ্যে ভরা দিনগুলোতে। পুরোনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরষ্পর জড়িয়ে ধরে আত্মহারা হয়ে হাত হাত ধরে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করেন। অনেকে আবার পুরোনো সহপাঠীদের পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

oplus_0

১১৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন বিদ্যালয়ের ১৯৮২ ব্যাচের ছাত্র অধ্যাপক মো. শাহজাহান। দীর্ঘদিন তিনি রাজনীতি ছাড়াও ছিলেন কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এনসি স্কুলের ১১৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ৪০ বছর পর স্কুল জীবনের সহপাঠী আনোয়ার হোসেন ও অজয় চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনি বলেন, ৬৪ জন বন্ধু রেজিস্ট্রেশন করলেও আমরা ৪৭ জন বন্ধু একত্রিত হয়েছি। এই অনুষ্ঠানটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। শাহজাহানের মতো এমন অনেকেই পুরোনো বন্ধুর দেখা পান। গল্পে আড্ডায় চলে যান সেই পুরোনো দিনে।

এসময় কথা হয় বিদ্যালয়ের ১৯৭১ সালের এসএসসি ব্যাচের ছাত্র আবুল ফাত্তাহ ফজলু’র সাথে। তিনি বলেন, ১১৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে আমাদের পুরনো ৮জন বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে। এটি বড় একটি পাওয়া। ১৯৭৭ ব্যাচের ছাত্র মুহিবুর রহমান বুলবুল বলেন, এই স্কুল থেকে পড়ালেখা করে আজ আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষক, ডাক্তার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছেন। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পূর্তি অনুষ্ঠান হওয়ায় আমরা ৩ জন বন্ধু একত্রে মিলিত হয়েছি। ১৯৭৯ ব্যাচের ছাত্র অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এহসান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা ১০-১২জন বন্ধু এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে মিলিত হয়ে পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছি। বন্ধুদের কাছে পেয়ে আমরা গান-আড্ডায় কয়েকটি ঘন্টা কাটিয়েছি। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি পাওয়া। ১৯৮১ ব্যাচের ছাত্র বদরুজ্জামান সজল বলেন, পূর্তি অনুষ্ঠানে আমাদের ২৫-৩০ জন বন্ধুর সাথে একত্রে দেখা হয়েছে। অনেকেই প্রবাসে থাকায় আসতে পারেননি। ১৯৮৭ ব্যাচের ছাত্র লন্ডন প্রবাসী আফজাল চৌধুরী খোকন বলেন, এই পূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য আমাদের ১৫ জন বন্ধু প্রবাসের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছি। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো আজ বেশি বেশি মনে পড়ছে।

আয়োজক কমিটি জানায়, ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে দিনব্যাপী এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। প্রায় ২৬০০ শিক্ষার্থী পূর্তি অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্কুলের পুরোনো স্মৃতিগুলো শিক্ষার্থীদের হ্নদয়ের সঙ্গে মিশে আছে।

দ্বিতীয় অধিবেশনে বিভিন্ন ব্যাচের স্মৃতিচারণ ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। তৃতীয় অধিবেশনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় শিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল, বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রদের ব্র্যান্ড প্লাটফর্ম-৩, জানকাস ও বাফারিং দল।

oplus_0

আবার অনেক প্রাক্তণ শিক্ষার্থী স্মৃতিচারণ করে বলেন, স্কুলের অনেক শিক্ষকদের খুব মিস করেছি অনুষ্ঠানে, যারা আমাদের পড়ালেখা করে মারা গেছেন। আমাদের এই আক্ষেপটা থেকে যাবে, স্কুলে ফিরে গেলাম কিন্তু শিক্ষকদের পেলাম না। নতুন কিছু মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখার প্লাটফর্ম তৈরী করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ।

উদযাপন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির আহবায়ক সুফিয়ান আহমেদ বলেন, অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, ট্রাফিক এবং বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ১০০ জন স্কাউটদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্কাউট স্কোয়াড কাজ করে। যার জন্য অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এনসি স্কুলের ১১৬ বছর পূর্তি সফল করার লক্ষে সংবাদ সম্মেলন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *