মাহফুজ শাকিল : মৌলভীবাজারের জুড়ীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইশরাত জাহান (০৬) নামের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার (০৫ অক্টোবর) রাতে উপজেলার জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের উত্তর বড়ডহর এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত ইশরাত উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বিরইনতলা গ্রামের বাসিন্দা পোস্টমাস্টার দুদু মিয়ার মেয়ে। সে বেসরকারি সংস্থা ‘ব্রাক’ পরিচালিত স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। এ সময় আরও পাঁচ ব্যক্তি আহত হন। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বহীনতার কারনে জুড়ী- বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের সমাই বাজার ও উত্তর বড়ডহরের মধ্যেবর্তী (বেলিপুল) এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ইশরাত জাহানের মতো নিষ্পাপ একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই সড়কে কালবার্ট তৈরির সময় রাস্তার উপর মাটি রেখে কাজ শেষ হয়। রাস্তার প্রায় অর্ধাংশ জুড়ে আছে মাটির স্তুপ, পাথর ও বালি। অনেকদিন হলো কাজ শেষ কিন্তু মাটির স্তুপ সরানো হয়নি। এদিকে কোন নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যার কারণে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশু ইশরাত নিহত হয় এবং আহত হন আরো পাঁচজন। এরকম দুর্ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সে জন্য রাস্তার উপরের মাটির স্তুপ গুলো সরিয়ে নেয়ার জোর দাবী জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুদু মিয়া স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার আজিমগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত শ্বশুরবাড়িতে বেড়িয়ে অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন। বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উত্তর বড়ডহর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীতমুখী একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় অটোরিকশাটি উল্টে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। তার মধ্যে ইশরাত জাহানকে গুরুতর আহত অবস্থায় জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় দুদু মিয়া, তাঁর স্ত্রী সামিয়া বেগম, অটোরিকশার চালক হোসেন আহমদ, মোটরসাইকেলের চালক ইদ্রিস আলী ও আরোহী আল আমিন আহত হন। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। আহত ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, অটোরিকশা উল্টে শিশু ইশরাতের মৃত্যু ঘটেছে। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মতিয়ার রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জুড়ীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পার্থ সরকার রাতে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, রাস্তায় রাখা মাটির স্তুপের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেনি। স্থানীয় এলাকার লোকজন রাস্তায় ধানের খড় রাখার কারনে এই দুর্ঘটনাটি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয়রা না জেনে এসব মন্তব্য করছে। তবে ওই শিশুর মৃত্যুটি খুবই দুঃখজনক। আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি।