কুলাউড়া প্রতিনিধি : ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসার পরশে মুখরিত হয়ে নানান আয়োজনে কুলাউড়ায় দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের সমাপ্ত হয়েছে। কমলা রঙ্গের ফাগুন এসে বন বাদাড় থেকে শুরু করে শহর থেকে গ্রামে আনন্দের জোয়ার উঠেছিল। এই আনন্দ মফস্বল শহর কুলাউড়ায় ছেয়ে গেছে বাহারী পিঠার ঘ্রাণ, তরুণ-তরুণীদের নান্দনিক সাজ, খোপায় গোলাপ আর বসন্তের মোহনীয় সুরের তালে কুলাউড়ার ডাকবাংলো মাঠে হৃদিক পরশের নরম ছোয়ায় পিঠা উৎসবকে করেছে বেশ উদ্বেলিত। একদিকে ফাগুন অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস। মনের খোরাক মেটাতে মেলা প্রাঙ্গণে এসেছেন তরুণ-তরুণী, নর-নারী, বয়বৃদ্ধ এবং শিশুরা। ১৪ ফেব্র“য়ারি রোববার কুলাউড়া ডাকবাংলো মাঠে ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আয়োজনে দিনব্যাপী উৎসবের আমেজে পিঠা উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। পিঠা উৎসবে মোট ১৪টি স্টল অংশ নেয় বাহারী সব পিঠাপুলি নিয়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, পিঠা উৎসবে বিভিন্ন স্টলে হরেক রকমের পিঠাপুলি, মুয়া-মুড়ি ও নানা রকম তিলুয়া-বাতাশার ঘ্রাণ একাকার হয়ে উঠেছে মেলার চৌপাশ। কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণীরা খুপায় বনফুল, গোলাপী ও টকটকে লাল গোলাপ ফুল ও মণিপুড়ী-তাঁতের শাড়ী পড়ে এসেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। তাদের কপালে লাল বিন্দি টিপ ও পায়ে রঙ্গিন আলতা, হাতের মেহেদীর রঙ্গে সাজে অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয়েছে। বছর খানেক করোনায় গৃহবন্ধি থাকার পর এই আগুন ঝরা ফাগুন এক নতুন উদ্দীপনা, আশা ও বেঁচে থাকার আনন্দে সবাই বের হয়েছেন ঘর থেকে মুক্ত বিহঙ্গে। নেই কোন পিছুটান, আছে শুধু রঙ্গিন অনূভূতি ও উল্লাস।
দর্শনার্থী, শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়ে কুলাউড়ার পিঠা মেলা প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। অনেকে আবার স্বপরিবারে এসেছেন ঘুরতে। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে আলোচনা সভা, উদীচীর শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি ও লটারী ড্র অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পিঠা উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
প্রথমবারের মত কুলাউড়া ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির আয়োজনে পিঠা উৎসব উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান সজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান আখইয়ের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুলাউড়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী পপি, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনর্চাজ বিনয় ভূষণ রায়, অধ্যক্ষ এমদাদুর রহমান ভুট্টো, মোঃ আতাউর রহমান, সিপিবি’র নেতা খন্দকার লুৎফুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য শিরীন আক্তার মুন্নি, জাসদ নেতা মঈনুল ইসলাম শামীম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সিপার আহেমদ, যুবলীগ নেতা আব্দুস শহীদ, সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপিকা সৈয়দা লতিফা বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিপুল চক্রবর্তী, নির্মাল্য মিত্র সুমন, সুফিয়া রহমান ইতি প্রমুখ।
আয়োজকরা জানান, কুলাউড়ার সর্বস্তরের ব্যবসায়ীসহ শহরবাসীকে আনন্দ দিতে এবং হরেকরকম বাহারি পিঠার স্বাদ নিতে আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজন। সাংস্কৃতিক অনুষ্টানসহ অংশগ্রহণকারী সকল স্টলগুলো ও সেরা স্টলকে শুভেচ্ছা পুরস্কার দেয়া হয়েছে। উৎসবটি সফল করতে আন্তরিক সহযোগিতা করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকবৃন্দদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।