বিশেষ প্রতিনিধি : সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে এবং শরীরে লুকিয়ে নথিপত্রের তথ্য চুরি অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। রাতে পুলিশ হেফাজতে রোজিনা ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে রোজিনা ইসলামের সহকর্মী ও স্বজনরা বলছেন, দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। গতকালই কভিড ভ্যাক্সিন নেওয়া রোজিনাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে আটকের প্রতিবাদে গতকাল রাতে শাহবাগ থানার ওসির কক্ষের সামনে অবস্থান নেন সহকর্মী-স্বজনরা। তাঁরা সেখানে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি করেছেন।
ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে হস্তান্তরের সঙ্গে একটি অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে।’
সহকর্মীরা বলছেন, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল বিকেল ৩টার দিকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। পরে খবর পাওয়া যায়, তাঁকে সেখানে কর্মকর্তারা একটি কক্ষে আটকে রেখেছেন। রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছু জানাননি। রাত ৮টার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নথির ছবি তোলার অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।’
শাহবাগ থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে ঢুকে তাঁর অনুুপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরে লুকান এবং মোবাইল ফোনে ছবি ধারণ করেন। এ সময় মিজানুর রহমান খান নামের এক পুলিশ সদস্য তা দেখে ফেলেন। পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভিন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমীন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব সাইফুল ইসলাম ভূঞাসহ কয়েকজন তাঁর কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র ও ছবিসহ মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর খান সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল এক বিবৃতিতে রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে মুক্তির দাবি করেছেন। এক বিবৃতিতে মহিলা পরিষদের নেতারাও সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে মুক্তির দাবি করেছেন।
অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের স্বামী শফিকুল ইসলাম মিঠু বলেন, তাঁর স্ত্রী গতকালই করোনার টিকা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করায় পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে রোজিনাকে হয়রানি করা হচ্ছে।