কুলাউড়ায় বিক্ষুদ্ধ জনতার বিজয় মিছিল, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর 

বিশেষ প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস শুরু করে বিজয় মিছিল করেছে। পৌর শহরের স্কুল চৌমুহনী পয়েন্ট থেকে উত্তর বাজার মিলিপ্লাজা মার্কেটের সম্মুখ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে ওই বিজয় মিছিলে। তবে এর মাঝেই আওয়ামী লীগ অফিসসহ বিভিন্ন অফিস, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ ৫ আগস্ট  সোমবার বিকেল তিনটার পর থেকেই শহরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রবেশ করতে শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর পাওয়ার পর পরই বিজয় উল্লাস শুরু হয়। এ সময় খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিল শহরে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ অলিগলি প্রদক্ষিণ করে। এরই মাঝে বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজিত হয়ে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, থানা পুলিশের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। পরে বিকেল ৪টায় কুলাউড়া থানায় শত শত বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রবেশ করে থানা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিকেল ৪ টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত থানার ভিতরে বিক্ষুদ্ধ জনতার হাতে অবরুদ্ধ ছিলেন সার্কেল, ওসিসহ থানার পুলিশ সদস্যরা।  একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল দীপঙ্কর ঘোষের সরকারি গাড়ি ও এক পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসির সরকারি গাড়ি ও থানার পুলিশ সদস্যদের ২০-২৫টি মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি গাড়ি ও পুলিশ সদস্যদের বসার কক্ষে ভাংচুর করা হয়। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাঙচুর করার পর জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের দক্ষিণ বাজারে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ভাংচুর করে কমপ্লেক্সের সামনে ভাঙচুর করা হয়। পরে শহরের দক্ষিণ বাজারে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমানের মালিকানাধীন মিতালি ফার্মেসি ভাঙচুর করে সমস্ত ঔষধ লুটপাট করা হয়। এরপর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করার পর শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় সদ্য নির্মিত তার মার্কেটে ভাঙচুর করা হয়। এরপর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেলের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট এবং গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। এরপর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হোসেন আল নাহিয়ানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরশদ ক্লথ স্টোরে হামলা ভাঙচুর করে সকল কাপড় লুটপাট করা হয়।

বিকেল ৩ টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত থানা পুলিশের অফিসের সামনে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষুদ্ধরা। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পুরো পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আসলে বিক্ষুদ্ধ জনতা শহর ত্যাগ করে চলে যান। রাত ৮টার পর থানার সম্মুখে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বিক্ষুদ্ধ জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আজ সোমবার বিকেল ৩টার আগ পর্যন্ত যে সরকার ছিল সেই সরকারের অধীনে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এখন যে সরকার গঠন হবে আমি সেই সরকারের অধীনে আমার সরকারি দায়িত্ব পালন করবো। আমার অতীত দায়িত্বকালীন সময়ে যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলে আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। এসময় তিনি আরো বলেন, অতীতে যদি কারো ওপর উদ্দেশ্যে প্রণোদিত কোন মামলা হয়ে থাকে তাহলে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *