আত্মগোপনে থাকা মন্ত্রী-এমপিরা কোথায়, যা বলছেন সেনাপ্রধান

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি শুরু করে নেতাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। মনে করা হচ্ছে, তাদের কেউ কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। আবার অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।

তবে কেউ কেউ সেনা হেফাজতেও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এমনটি জানিয়েছেন। তবে কারা সেনা হেফাজতে রয়েছেন তা নিয়ে নাগরিক সমাজের মধ্যে কৌতূহল তৈরি রয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী-এমপিদের হেফাজতে নেওয়া বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘তাঁদের জীবনের যে হুমকি আছে। সেটার জন্য আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি।
তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো বিচারবহির্ভূত কাজ না হয়। তবে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বা মামলা হলে তারা শাস্তির আওতায় আসবেন।’

সেনাপ্রধান আরো বলেন, ‘তাঁদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা আমরা করব।
তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয় তবে অবশ্যই তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইবে না যে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কোনো একশন তাদের ওপর হোক।’

অবশ্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যাদের অপরাধের সম্পৃক্ততা আছে এবং আত্মগোপনে আছেন তাদের আমরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি। সেনা প্রধান যা বলার বলেছেন। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি।
অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে আরো অগ্রগতি আসবে।’

এদিকে আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর একটি সংলাপে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কারা সেনা হেফাজতে আছে তার একটা তালিকা করা দরকার। এসব ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পরপরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য। পরদিন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। তার কিছুক্ষণ পর ইমিগ্রেশন পুলিশ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে আটক করেন। এ দুজনকেই সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছিল।

ওইদিন বাংলাদেশ পুলিশের এক বার্তায় জানানো হয়েছিল, ‘প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে বিভিন্ন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিবর্গ যেমন- সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন না করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে বিমানবন্দর থেকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকেও আটকের খবর আসে গণমাধ্যমে। তবে, তাদের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে কোনো তথ্য মেলেনি।

তা ছাড়া গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বিএনপি নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়লে তাকেও হেফাজতে নেয় সেনাবাহিনী। চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটকের পর তাকেও সেনাবাহিনীর হেফাজতে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে বাংলাদেশের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশ কয়েকদিন কার্যত সরকারবিহীন অবস্থায় ছিল। এরপর গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সময়টায় পুলিশও ছিল অনুপস্থিত। ফলে নিরাপত্তা কিংবা আইনিব্যবস্থা নেওয়ার কাজ আপাতভাবে সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনীকেই করতে হয়েছে। এরপর গত রবিবার (১১ আগস্ট) থেকে ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করে পুলিশের কার্যক্রম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *