পাগলা মসজিদে এবার পাওয়া গেল ৭ কোটি টাকা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেল সাত কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা।

শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণনা শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় দিকে জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ টাকার পরিমাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশি নগদ টাকা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রুপার অলংকারও পাওয়া গেছে সিন্দুকে।

সর্বশেষ চলতি ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল।
তখন রেকর্ড সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। সে সময় ২২০ জনের একটি দল সাড়ে ১৮ ঘণ্টায় এ টাকা গণনার কাজে অংশগ্রহণ করেছিল। এ ছাড়া দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়।

তিন মাস ২৬ দিন পর শনিবার সকাল ৭টার দিকে খোলা হয় পাগলা মসজিদের দানবাক্স। টাকাগুলো ভরতে প্রয়োজন হয় ২৮টি বস্তা। দানের টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে গণনা করতে ১২ ঘণ্টা লেগে যায়। গণনার কাজে রূপালী ব‌্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মাদরাসা ও পাগলা মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তিন শতাধিক লোক অংশ নেয়।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে সিন্দুকগুলো খোলা হয়। বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ ও আনসার মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, তিন মাস ২৬ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়। স্থায়ী দানবাক্সগুলো ভরে যাওয়ায় এবার বাড়তি আরেকটি অস্থায়ী দানবাক্সও দেওয়া হয়েছিল।

২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স।
চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহুয়া মমতাজের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন।

স্থানীয়রা জানায়, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়, এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসে পাগলা মসজিদে। দান করে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলংকারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন।

মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সব কিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। শিগগিরই হয়তো কাজে হাত দিতে পারব আমরা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *