কুলাউড়ায় শ্রীপুর জালালীয়া ফাজিল মাদ্রাসার চারতলা ভবনের উদ্বোধন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: কুলাউড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রীপুর জালালীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার নবনির্মিত চারতলা একাডেমিক ভবনের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর  মঙ্গলবার দুপুরে ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ শামসুল হকের সভাপতিত্বে ও ভাটেরা স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক একেএম তাহিরুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এবং ভবনের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ সাইফুদ্দিন ইয়াহইয়া, মৌলভীবাজারের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ মুহিবুল হাসান, ব্রাহ্মণবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মমদুদ হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম খান, রফিক আহমদ, বিশিষ্ট আইনজীবি ও মাদ্রাসার সাবেক অধ্যাপক এড. ছালিক আহমদ চৌধুরী, মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোঃ তাহিরুল হক, গাংকুল ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এফ এইচ এম ইউছুফ আলী, ইউছুফ গণী আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ এএনএম আলম, মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ লোকমান আলী, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার লুৎফুর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ছয়ফুল ইসলাম, মাদ্রাসা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মতই মিয়া, কুলাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ শাকিল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মহি উদ্দিন রিপন প্রমুখ। এসময় এলাকার বিভিন্ন গণমান্যব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ২০ বছর ধরে শিক্ষার মান নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার মান একপর্যায়ে পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষের সংকট নিয়ে কথা থাকলেও এখন আর কোথাও শ্রেণীকক্ষ সংকট নেই। কিন্তু শিক্ষার মান তো বাড়েনি উল্টো কমেছে। এগুলো নিয়ে গবেষণা করলে বুঝা যাবে কেন শিক্ষার মান কমেছে। আমরা অনেক নিয়োগ কমিটিতে দেখি একটা দপ্তরে ৩০ জন লোক নিয়োগ হবে কিন্তু আমরা ৩০জনকে নিতে পারছি না। আবার এরকম হয়েছে কোন কোন নিয়োগে কাউকে নিতে পারিনি। কারণ হলো মৌখিক পরীক্ষায় সর্বনিম্ন যে পাশ মার্ক থাকে এটাতে অনেকে উত্তীর্ণ হতে পারেনা। খুবই অবাক হই স্নাতক শেষ করে কাউকে যখন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবই থেকে প্রশ্ন করা হলে কেউ এর উত্তর দিতে পারেনা। এজন্যই আজকে আমাদের শিক্ষার মান অনেক কমে এসেছে। অথচও এখন অনেক সুন্দর ভবন হচ্ছে। আগে যে শিক্ষক ছিলেন এখন তার দিগুণ শিক্ষক আছেন প্রতিষ্ঠানে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সহায়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি। এরকারণ হলো মেধার যোগ্যতা বাড়েনি।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তোমাদের শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় রাখবে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষকদের অব্যাহতি করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। এগুলো মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। আমি জানি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী হয়।
জেলার মধ্য এই প্রতিষ্ঠান ভালো ফলাফল অর্জন করায় খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। ওই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় শুরুতেই যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের স্মরণ করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান তৈরিতে অতীতে এবং বর্তমানে যারা কাজ করে গেছেন তারা নিঃসন্দেহে খুবই মহৎ কাজ করেছেন। তারা এগিয়ে এসেছেন বলে মাদ্রাসাটি আজ অনেক সুনাম কুঁড়িয়েছে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে হবে না, শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আমরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান বাড়ানোর জন্য সকলে মিলে কাজ করবো।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ শামসুল হক জানান, ১৯৭০ সালে শ্রীপুর জালালীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আট শতাধিক। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বাস্তবায়নে এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদ্রাসার ৪ তলা একাডেমীক ভবনের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। কাজ শেষ হলে চলতি বছরের ২৫ জুলাই নবনির্মিত ভবনটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী চারতলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক একাডেমিক ভবন পাওয়ায় আনন্দিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *