আ’লীগ নেতা সলমান ও ইউপি চেয়ারম্যান গিলমান আত্মগোপনে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি  :

এ কে এম সফি আহমদ সলমান ও জাফর আহমদ  গিলমান দুই ভাই। বড়ভাই সফি আহমদ সলমান কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। অন্যদিকে জাফর আহমদ গিলমান কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুই সহোদরকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তারা দুজনই আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে মসনদ হাতে পেয়ে কুলাউড়ায় দাপুটের সাথে চলাফেরা করেন। কাউকে কোন তোয়াক্কা করেননি। সফি আহমদ সলমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এর পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করার কারণে অনেকটা কোনটাসা হয়ে পড়েন সলমান। নির্বাচন পরে তিনি অবকাশ যাপনের জন্য লন্ডনে থাকা তাঁর তিন ছেলের কাছে চলে যান।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো কুলাউড়ায়ও আওয়ামীলীগ নেতাদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও সরকারী অফিস সমূহে অগ্নিসংযোগ করে তান্ডব চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এরই মাঝে বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজিত হয়ে পৌর শহরের দক্ষিণ বাজারে অবস্থিত সফি আহমদ সলমানের মালিকানাধীন মিতালী ফার্মেসি ভাংচুর করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ঔষধ লুট করে এবং তাঁর বাসা ভাংচুর করা হয়।

অন্যদিকে জাফর আহমদ গিলমান গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে একদিনও ইউনিয়ন পরিষদে যাননি। আত্মগোপনে থাকায় অফিস না করার কারণে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। চলমান পরিস্থিতিতে সরকার পতনের পর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলীগ পন্থী অধিকাংশ চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে কিছুদিন থাকলেও তারা অনেকেই এখন অফিস করছেন। কিন্তু সেই দিক থেকে ভিন্ন হলেন কাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান। তিনি ঘোষনা ছাড়াই পরিষদে যাচ্ছিলেন না। এতে তাঁর প্রতি সাধারণ জনগণের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছিলো। এদিকে তাঁর নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কানাডা প্রবাসী হাবিবুর রহমান ছালামসহ তাঁর অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে তাঁর বিচার ও চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্তের দাবি জানান।

এদিকে কুলাউড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর, ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সফি আহমদ সলমান ও তাঁর ছোটভাই কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমানসহ ৮৩ জনকে আসামী করে গত ২৪ আগস্ট উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের কুদ্দুস মিয়া ওরফে কালা মিয়ার ছেলে পারভেজ মিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-১২) দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত আরো ৪০-৫০ জন আসামী করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে জাফর আহমদ গিলমান এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।

এদিকে জাফর আহমদ গিলমান দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত থাকায় গত ১ সেপ্টেম্বর রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ও পরিষদের সকল সদস্যদের সম্মতিক্রমে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ আতাউর রহমান আতিককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান গত ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। তখন কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁরই আপন বড় ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম সফি আহমদ সলমান। ক্ষমতার স্বাদ হাতে পেয়েই ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করেন। এতদিন তাঁর ভাই সফি আহমদ সলমান ও তাঁর ভয়ে সাধারণ জনগণ মুখ না খুললেও সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে জনগণ এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে বিভিন্ন লোকজন লেখালেখি করছেন।

উল্লেখ্য, গত কোরবানির ঈদের আগে সফি আহমদ সলমান ও জাফর আহমদ গিলমান লন্ডন সফরে গেলেও জাফর আহমদ গিলমান সরকার পতনের এক সপ্তাহ আগে দেশে ফিরলেও সফি আহমদ সলমান দেশে ফিরেছেন কিনা সেই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *