কুলাউড়ায় আ’লীগের ৮৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে ধুম্রজাল!

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাঁধা প্রদান, ককটেল সাদৃশ্য বস্তু নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের মারধর করার কারণে কুলাউড়ায় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা, ৬ ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮৩ জন নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক আইনে গত ২৪ আগস্ট উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের কুদ্দুস মিয়া ওরফে কালা মিয়ার ছেলে পারভেজ মিয়া নামের এক ব্যক্তি  মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের ৫দিন পর ২৯ আগস্ট তিনি উক্ত মামলা থেকে ৪৫ জন নেতা কর্মী নাম বাদ দিতে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে একটি আবেদন করলে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া উক্ত পারভেজ মিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নয় বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুলাউড়ার সমন্বয়করা ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের সাথে তাদের দলের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন।

পারভেজ মিয়া নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থাকার কথা মামলায় উল্লেখ করলেও কুলাউড়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা একাধিক সমন্বয়করা মামলা এবং মামলার বাদী তাদের সাথে সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান। একাধিক সূত্রের মতে, এ মামলার পেছনে গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত এক চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক কয়েক ব্যক্তির ইন্ধন রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর বাদী ও আসামীদের নাম নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

পারভেজ মিয়ার করা মামলার আসামিরা হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, সিনিয়র সহ-সভাপতি একেএম সফি আহমদ সলমান, শফিউল আলম সফি ও অরবিন্দু ঘোষ বিন্দু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম বদর, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক ফজলু, কাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান, ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন, হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স, কুলাউড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান ও কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ৮৩ জন নেতাকর্মী।

এদিকে সদ্য সাবেক মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শফিউল আলম শফি, সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম বদর, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক ফজলু, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন, ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম, হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স, কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান, কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শাহীন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সবুজ, যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান বক্স, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মনি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মান্নাসহ ৪৫ জন নেতাকর্মীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করেন বাদী পারভেজ মিয়া।
এর আগে পারভেজ মিয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই সকাল ১১টার পর কুলাউড়া পৌর শহরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে স্লোগান দিলে মামলার প্রধান আসামিসহ অন্যান্যদের নির্দেশে শহরের মিলিপ্লাজার সামনে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল সাদৃশ্য বস্তু নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীসহ তাকে মারধর করে। এতে তিনিসহ অনেকেই আহত হন।
এদিকে গত ২৯ আগস্ট থানায় জমা দেয়া অব্যাহতি পত্রে বাদী পারভেজ মিয়া উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্ট পরিস্থিতির ঘটনা উল্লেখপূর্বক বিস্ফোরক আইনে তিনি একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় আসামীদের নামের তালিকা তাড়াহুড়া করে প্রস্তুতের সময় কয়েকজন বিবাদীর নাম-ঠিকানা জানা থাকার কারণে এজাহারে উল্লেখ করেন। ৪৫ জন বিবাদীর নাম লোকমূখে শুনে এজাহারে উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে ওই ৪৫জন বিবাদী মামলায় আনীত অভিযোগের সাথে জড়িত নন। তারা বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেতে তার কোন আপত্তি নেই। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বিবাদীদের অর্ন্তভুক্ত না করে অব্যাহতির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিবাদীদের আটক না করার জন্য অনুরোধ করেন মামলার বাদী।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুলাউড়ার প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান তারেক বলেন, পারভেজের মামলার সাথে আমাদের ছাত্র আন্দালনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাকে মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সে আমাদের জানায়, পারিবারিক ঘটনায় সে থানায় অভিযোগ দিয়েছিল কিন্তু ৮৩ জনের মামলার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। আরেক সমন্বয়ক মইনুল ইসলাম বলেন, মামলার বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা এমনকি বাদীকেও আমরা চিনিনা। মামলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে তাকে ফোন দিলে সে জানায়, তাকে দিয়ে এই মামলা করানো হয়েছে।
মামলার বাদী পারভেজ মিয়ার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে আমার বাড়িঘরে হামলা করার কারণে ১৫-১৬ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে কয়েকজন ব্যক্তি আমার স্বাক্ষর নিয়ে ওই মামলায় ৮৩ জনকে সম্পৃক্ত করে। ওই মামলার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা এমনকি সাবেক মেয়রসহ অনেক ইউপি চেয়ারম্যানকেও ওই মামলায় জড়ানো হয়েছে পরে সেটি আমি জেনেছি। সবকিছু মিলিয়ে আমি পরিস্থিতির শিকার হয়ে জীবনের প্রথম মামলার বাদী হয়েছি। না জেনে না বুঝে যাদের নাম মামলায় আসামী করা হয়েছে মামলার এজাহার দেখার পর নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হয়েছে। এখন আমার একটাই চাওয়া, আমার কারণে যাতে কোন নিরপরাধ মানুষ মামলা হয়রানির শিকার না হয়। আমি তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য পুলিশের কাছে আবেদন দিয়েছি।
মামলার বিষয়ে ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম বলেন, আমার উপরে মামলা হয়েছে শুনে আমি মামলার বাদীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মামলার বাদী বলেছে, সে আমাকে চিনে না আমার নাম মামলায় সে অন্তর্ভুক্ত করে নাই কিভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সে বলতে পারবেনা।
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মমদুদ হোসেন ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান জানান, তারা চলমান পরিস্থিতিতে কোন মিছিলে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাদের এই মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়রানি করার জন্য আসামী করা হয়েছে। সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে এই মামলা থেকে তাদের অব্যাহতির দাবি জানান। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কে কোন দল করে সেটা আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় ছিলনা। সাধারণ মানুষকে তাঁর নায্য সেবাটুকু দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট আবেদ রাজা বলেন, মামলা প্রক্রিয়ার সাথে আমি কিংবা উপজেলা বিএনপির কেউই সম্পৃক্ত নই। আমি জানিনা, কে বা কারা কিসের জন্য এই মামলা করেছে। মামলার বাদী পারভেজ বিএনপির সাথে যুক্ত রয়েছেন বলে আমার জানা নেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *