শ্রীমঙ্গলে গভীর রাতে হাফেজিয়া মাদরাসা থেকে পালিয়ে যায় ১৫ জন শিক্ষার্থী, সিলেট থেকে উদ্ধার

এহসান বিন মুজাহির: শ্রীমঙ্গলে একটি হাফেজিয়া মাদরাসার আবাসিকে থাকা ১৫জন শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী গতকাল শুক্রবার রাত ২-৩টার দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান বলে খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের মন্দিরগাঁও হাফিজিয়া মাদরাসায়।

গভীর রাতে মাদরাসার কাম্পাস থেকে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি মনে করছেন অনেকেই। শিক্ষার্থীরা আবাসিকে শিক্ষকদের সার্বিক তত্ত্ববধানে থাকার পরও মাদরাসা থেকে তভীর রাতে কিভাবে পালিয়ে গেলো এর দায় কি কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। শনিবার ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে

মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্দিরগাঁও হাফিজিয়া মাদরাসায় পরিচালক মাওলানা মুজিবুর রহমান আল মাদানী। তিনি বলেন, শনিবার ফজরের পর আমার কাছে খবর এলো আমাদের মাদরাসার আবাসিকে থাকা ১৫জন শিক্ষার্থীর খোঁজ মিলছে না। শুক্রবার রাত ২টা থেকে ৩টার ভেতরে তারা মাদরাসা থেকে বেরিয়ে যায়। রাত ৩টার পর থেকে সংশ্লিষ্ট অভিভাবক ও আশপাশ খোঁজ নিয়ে তাদের সন্ধান মেলেনি। পরে আমি এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ দেই এবং নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিবাবকদের ফোনে বিষয়টি জানাই। অনেকে এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও খবর প্রচার করেন। খবরটি জানাজানি হলে আজ দুপুেের দিকে নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তাদের অভিভাবক ও শ্রীমঙ্গলে থানার ওসির কাছে খবর আসে যে তারা সিলেটে আছে। পরে ওসি সাহেব মুঠোফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করে শ্রীমঙ্গলে আসার অনুরোধ করলে তারা বারোটার পরে সিলেট থেকে ট্রেনযোগে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। প্রায় ২টার দিকে নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থীরা শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে নামেন। এসময় মাদরাসার শিক্ষক এবং অভিভাবকরা তাদের রিসিভ করে নিয়ে যান। হঠাৎ মাদরাসা থেকে ১৫জন শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কারণ কী থাকতে পারে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, শিক্ষার্থীরা শাহজালাল রহ. মাজারে গিয়েছে বলে জেনেছি। তাদের সাথে বিস্তারিত কথা বলে অন্য কোনো কারণ থাকলে জানার চেষ্টা করবো। এদিকে একসাথে ১৫ শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ প্রতিবেদকের একটি পোস্ট ছিল, ‘রাত ২টায় মাদরাসা থেকে ১৫ ছাত্রের পলায়ন, সকালে নিখোঁজ বলে প্রচার, অবশেষে খোঁজ পাওয়া যায় সিলেটে’। এই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ মনে করে প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবি জানান। কেউ কেউ লেখেন আসলে ছাত্ররা ঘুরতে গিয়েছে, নিখোঁজ নয়। আবার কেউ লেখেন হাফেজি মাদরাসার ছাত্ররা হুজুরের পিটুনির ভয়ে পলায়ন করেছে। মন্তব্যের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ ঘটনার প্রকৃত কারণ জানাতে প্রশাসন, মাদরাসা কতৃপক্ষ ও সংবাদকর্মীদের অনুরোধ জানান।

মাদরাসা থেকে ভোররাতে সিলেট পালিয়ে যাওয়া মাহমুদ ছানী নামের এক কিশোর শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সিলেটের হজরত শাহ জালাল (রহ.) এর মাজারে গিয়েছিলাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, পড়ালেখার চাপ এবং মাদরাসার শিক্ষকের পিটুনির ভয়ে তারা পালিয়েছে। এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে যোগাযোগ হয় শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ এর সাথে। তিনি বলেন, আসলে ছাত্ররা নিখোঁজ হয়নি, পালিয়েছে। ছাত্রদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তারা জানায় এ মাদরাসায় তারা আর পড়তে চাচ্ছে না। মাদরাসার শিক্ষকের সাথে রাগ করে তারা সিলেটে চলে যায়। মুঠোফোনে আমি তাদেরকে বলেছি তোমরা আসো, আমরা বসে তোমাদের কথা শুনবো, বিষয়টি দেখবো। পরে তাদেরকে সিলেট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *