কুলাউড়ায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাধা দিয়ে জমি দখলের পায়তারা

কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সদর ইউনিয়নের গাজিপুর গ্রামে একটি পরিবারের ব্যক্তিগত জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে কৌশলে জমি দখলের পায়তারার অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তিগত জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে না পারায় প্রতিপক্ষের ইন্দনে বিক্রিত জমির মালিকরা নানাভাবে হুয়রানি করছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আরফাতুল হক চৌধুরী রিফাতকে। দীর্ঘদিন থেকে দুইপক্ষের চলমান বিরোধ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলেও নতুন করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন লিয়াকত আলী হেলাল গং।
জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের কুলাউড়া-গাজীপুর পাকা সড়ক থেকে পশ্চিমমুখী গাজীপুর গ্রামে প্রবেশে প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। কুলাউড়ার সাদেকপুর মৌজায় ১০৩৫৮ ও ১০৩৫৯ দাগে ৪ শতক ভূমিতে গাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আনোয়ারুল হক চৌধুরীর ব্যক্তি মালিকানা রাস্তা রয়েছে। পেছনের অংশের মালিক স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত আলী হেলাল। লিয়াকত আলী হেলাল গং তার জমি প্লট আকারে বিভিন্ন লোকজনকে ভূলবুঝিয়ে আরফাতুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন বলে বেশি দামে জমি বিক্রি করেন। হেলালের কাছ থেকে কেনা জমিতে ৮-১০টি পরিবার বসবাস করছে। দুই বছর আগে আরফাতুল হক চৌধুরী তাঁর জায়গার সীমানায় রাস্তার পাকা দেয়াল নির্মাণ করে ফেলেন। আরফাতুল হক চৌধুরী তার জমিতে সীমানা প্রাচীর করতে গেলে বাধা দেয় হেলাল গং। এদিকে হেলালের কাছ থেকে ক্রয়কৃত জমির মালিক তাছলিমা বেগম, জমির আলী, আজাদ মিয়া, মোস্তফা মিয়া, খয়ের মিয়া, রুশনা বেগম, জয়নাল মিয়া, সিরাজ মিয়া প্রতারণার অভিযোগ এনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে হেলালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, সাদেকপুর মৌজায় কৃষিক্ষেতের উপযোগী জায়গা ৫-৬ লাখ টাকা প্রতি বিঘা। বসতবাড়ি নির্মাণ করার জন্য ক্রয়কৃত জমি থেকে সরকারি প্রধান সড়ক পর্যন্ত দেখিয়ে জমির মূল্য ধরা হয় ১৫ লাখ টাকা প্রতি বিঘা। মৌখিক বায়নামা করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মহরী দিয়ে জায়গা জরিপ করে নিজ নিজ মালিকানা সমজিয়ে দেন হেলাল গং। পরবর্তীতে ক্রয়কারী জমির মালিকরা জানতে পারেন, তাদের জমি থেকে সরকারি রাস্তা পর্যন্ত যে রাস্তা দেখিয়ে তাদের কাছে জমি বিক্রি করা হয়েছে সেটি রাস্তাটির মালিক আরফাতুল হক চৌধুরীর পিতা মৃত আনোয়ারুল হক চৌধুরী। পরে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জমি বিক্রিকারী লিয়াকত আলী হেলাল তাদের জানান, কারো কাছে যেতে হবে না। তিনি রাস্তার ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন সময় অতিবাহিত করে কোন রাস্তা তৈরি করে দেননি। পরবর্তীতে আরফাতুল হক চৌধুরী তাদের রাস্তায় সীমানা প্রাচীর তৈরি করলে ক্রয়কৃত জমির মালিকদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ওই জমিতে ১০ শতক জমি ক্রয়কারী ফাতেমা বেগম নামে আরেক মহিলা কুলাউড়া থানায় হেলালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি সমাধান করে দিলে লিয়াকত আলী হেলাল নিজের জমিতে রাস্তা তৈরি করে দিলেও ওই রাস্তা দিয়ে স্থানীয় ৮-১০টি পরিবারের লোকজন চলাচল করছেন। কিন্তু ওই রাস্তাটি ব্যবহার না করে জমি বিক্রয়কারী লিয়াকত আলী হেলাল ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করে সম্প্রতি আরফাতুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন রাস্তা দখল করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। জমি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় দুটি অভিযোগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই আরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে আরফাতুল হক চৌধুরী রিফাতের পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
ভুক্তভোগী আরফাতুল হক চৌধুরী বলেন, গাজীপুর গ্রামে সাদেকপুর মৌজায় বিভিন্ন দাগে আমাদের পৈত্রিক অনেক জমি রয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ হেলাল গং আমাদের জমিতে ব্যক্তিগত রাস্তা দেখিয়ে স্থানীয় কিছু পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকার জায়গা ১৫ লাখ টাকা দামে বিক্রি করেন। আমাদের পারিবারিক রাস্তা দিয়ে প্রতিপক্ষের বিক্রিত জমির মালিকরা ব্যবহার করা সমীচীন নয়। এ নিয়ে ক্রয়কারী জমির মালিকগণ হেলাল গংয়ের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে। জমি নিয়ে অভিযোগের পর আদালতে আমি জবাব দিয়ে এসেছি। এছাড়া আমার পক্ষে পুলিশি দুটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে লিয়াকত আলী হেলাল বলেন, রাস্তার শেষ প্রান্তে তাঁদেরসহ অনেকেরই জমি রয়েছে। এর মধ্যে তাঁরা কিছু জমি বিক্রি করেছেন। সেখানে লোকজন বাড়ি করে ফেলেছেন। এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন থেকে ওই রাস্তা ব্যবহার করতেন। কিন্তু রিফাত চৌধুরী গং ওই রাস্তায় সীমানা প্রাচীর তৈরি করে ফেললে স্থানীয়দের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সীমানা প্রাচীর ভেঙে না দেওয়াতে তিনি নিজের জমির ওপর দিয়ে ওইসকল পরিবারের চলাচলের বিকল্প রাস্তা করে দেন। তিনি আরো বলেন, অন্যর জমির রাস্তা দেখিয়ে বেশিমূল্যে জমি বিক্রির অভিযোগটি সঠিক নয়।

এ বিষয়ে সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান বলেন, রাস্তায় দেয়াল নির্মাণের পর তিনি দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে প্রমাণিত হয় রাস্তার জমিটি রিফাতদের। রিফাত বৈঠকে জানায়, এলাকার লোকজন তার ব্যক্তিগত রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু তার জমি দেখিয়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে অধিক দামে জায়গা বিক্রি করলে তাঁকে ক্ষতিপূরন বাবদ ৫-৭ লাখ টাকা দিতে অপরপক্ষ হেলালকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি (হেলাল) কোনো সাড়া না দেওয়ায় বিষয়টির এখনো সমাধান করেননি। একে অপরকে ছাড় ও ক্ষতিপূরণ দিলে দুইপক্ষ সমঝোতায় পৌঁছালে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় রাস্তায় ইটসলিং করে দেয়া হবে। #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *