কুলাউড়া প্রতিনিধি : দেশীয় কয়েকটি প্রজাতি থেকে ক্রসকৃত আমন ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন ও ধানের আগাম ফলন সংগ্রহ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর গবেষণায় উঠে আসা এই আমন ধানের আগাম ফলন দেখা গেছে। তাঁর উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের নাম কানিহাটি-১ থেকে কানিহাটি-১৬ নির্ধারণ করা হয়েছে তাঁর নিজ গ্রামের নামে। বীজ বপনের পর থেকে একশ’ আট দিনের মাথায় নতুন জাতের এই ফসল কাটা সম্ভব হয়েছে। ১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নতুন জাতের এই আমন ধান কেটে ঘরে তুলেন।
বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত নতুন জাতের আমন ধানের চারা রোপন করে নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস আগে ধান কাটা শুরু হয়। কৃষকরা সচরাচর আমন ফসল কাটেন ৪ থেকে সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে। এর আগে আরো ৪ জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন এই ধান গবেষক। তাঁর উদ্ভাবিত এ ৪ জাতের ধান হল হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম। ধানের উদ্ভাবন করে সফল ফলনও পেয়েছেন বলে জানান তিনি। জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামের বাসিন্দা।
সরেজমিন ধান গবেষক ড. আবেদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আমন ফসল কাটতে দেখা যায়। ৩০ শতক জমিতে প্রদর্শনী হিসেবে কানিহাটি-১ থেকে কানিহাটি-১৬ আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। তাঁর উদ্ভাবিত আমন ধানের স্থানীয় নাম কানিহাটি-১ থেকে কানিহাটি-১৬ জাতের মধ্যে কানিহাটি-৭ জাতের আমন ধান কাটা হয়। ড. আবেদ চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করলেও তিনি বছরে দু’একবার দেশে আসেন। তাঁর গবেষণাকৃত ধানের জাত নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে ধান রোপন, পরিচর্যা ও ফসল উত্তোলন করেন। গত কয়েক বছর যাবত তিনি দেশীয় প্রজাতির ধান নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গবেষণায় একই রোপনে পরপর তিনবার ফসল উৎপাদন করা হয়েছে। সিলেটের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী আউশ প্রজাতির ‘কাসালত’ ধানেরও তিনি উদ্ভাবন করেন।
আবেদ চৌধুরীর বাড়িতে ধানের নতুন জাত নিয়ে কাজ করা কানিহাটি গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া বলেন, এ বছর আমন প্রদর্শনী মাঠে স্যারের ৩০ শতক জমিতে চাষাবাদ করে ১৪ মণ ধান সংগ্রহ হয়েছে। এ ধানে চিটার পরিমাণ নেই বললে চলে। এলাকার কৃষকরা এ প্রজাতির আমন ধানের ফলন দেখে আগামী মৌসুমে চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়েছেন। কম সময়ে ভালো মানের উৎপাদন বলে তিনি দাবি করেন।
রাসেল মিয়া আরও বলেন, গত ২৫ জুন বীজতলা তৈরীর পর ২৭ জুলাই ধানের চারা রোপন করি। এরপর নিয়মিত পরিচর্চা শেষে ১০৮ দিনের মাথায় (৩ মাস ১৮ দিন) ১৩ অক্টোবর বুধবার ফসল কাটা শুরু করি। সাধারণত আমন ধানের বীজতলা তৈরী থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ মাস। আর গ্রামগঞ্জে আমন ধান কেটে ঘরে তোলার নির্দিষ্ট সময় অগ্রহায়ণ মাস।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জিন বিজ্ঞানী, ধান গবেষক ড. আবেদ চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধানের নাম নিজ গ্রামের নামে দিয়েছেন কানিহাটি-১ থেকে কানিহাটি-১৬। তিনি আরও বলেন, এর আগে আউশের সময় ওই নামেই তাঁর জমিতে একবার রোপণ করার পর ৩ বার ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। প্রথমবার চাষের পর আর পরবর্তীতে কোন চাষ দিতে হয়নি। সঠিক পরিচর্যায় ও সামান্য সার প্রয়োগে একে একে তিনবার ফসল উৎপাদন সম্ভব। সে জমিতে এখন চতুর্থবারের মতো ফসল এসেছে। এ পদ্ধতিতে সারা বছর ধান চাষাবাদে ভালো ফলন করা যাবে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, আসলে জাত ভেদে আমন ধান বীজতলা তৈরী থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত কোনটি ১১০ দিন, ১২০ দিন, ১৩০ দিন আবার কোনোটি ১৪০ দিন সময় লাগে। আর ড. আবেদ চৌধুরী নিজে একজন জিন বিজ্ঞানী ও ধানের গবেষক, তাঁর উদ্ভাবিত ধান উন্নত জাতের ও ভালো মানের হওয়ারই কথা।