কুলাউড়ায় ইউআইটিআরসিই’র সহকারী প্রোগ্রামার মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি : কুলাউড়ায় উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশনের (ইউআইটিআরসিই) সহকারী প্রোগ্রামার প্রকৌশলী মোঃ মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি রাজনগর উপজেলা থেকে কুলাউড়ায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। এর পর থেকে তাঁর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড ও আচরণে ক্ষুব্ধ হন ট্রেনিং নিতে আসা শিক্ষকগণ। অনেক শিক্ষকই ট্রেনিং না নিয়েই চলে যান। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার বিষয়ে প্রতিবাদ করায় একজন মাস্টার ট্রেইনারকে প্রতিহিংসামূলকভাবে শোকজ নোটিশ দেন তিনি। এ নিয়ে কুলাউড়ার শিক্ষক সমাজের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক শিক্ষক ট্রেনিং নিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) থেকে কুলাউড়া উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন বিভাগে বিভিন্ন সময় বরাদ্দ আসে। এসব বরাদ্দে তিনি নয়ছয় করে বিল উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যানবেইস থেকে শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের জন্য দুইটি ল্যাপটপ ক্রয় বাবদ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু তিনি ১টি ল্যাপটপ ক্রয় করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করার জন্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও মাত্র ২৫ হাজার টাকার কাজ করেন। এছাড়া ল্যাব সেন্টারে কম্পিউটারের ইউপিএস ১২ টি ক্রয় করার কথা থাকলেও তিনি একটিও ক্রয় করেননি। পর্দা ১৮টি ক্রয় করার কথা থাকলেও ক্রয় করেছেন দুইটি। ৫ বছর আগে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ১২ হাজার টাকা দিয়ে দুইটি সোফা ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি সেই সোফা নিজে ক্রয় করেছেন বলে বিল তুলেন। বিভিন্ন সরকারি দিবসে আলোকসজ্জার জন্য সরকারী বরাদ্দ আসলেও তিনি আলোকসজ্জা না করেই বিল উত্তোলন করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে রিসোর্স সেন্টারে আউটসোর্সিংয়ে সুইপার পদে চাকুরী করা সিরাজগঞ্জের আব্দুল আলিমকে মনগড়া অভিযোগ দিয়ে তিনি চাকুরীচ্যুত করেন। ল্যাব সহকারীকে কোন কারণ ছাড়াই তিন মাসের বেতন বন্ধ রাখেন। এছাড়াও ব্যানবেইসের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমানের উপস্থিতিতে গত ১ ডিসেম্বর মাস্টার ট্রেইনারদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে জুম মিটিং চলাকালে মাস্টার ট্রেইনার ও উত্তর কুলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সালাহ উদ্দিন আজিজ ট্রেনিং সেন্টারে ৩ বছর থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বিষয়টি ডিজিকে জানান। তাৎক্ষণিক ডিজি প্রোগ্রামার মইনুল ইসলামের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। তখন মইনুল ইসলাম এর সদুত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু পরদিন মইনুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে মাস্টার ট্রেইনার শিক্ষক সালাহ উদ্দিন আজিজকে শোকজ করেন। ওই নোটিশে তিনি সালাহ উদ্দিন আজিজকে কেন প্রশাসনিক বিষয়ে কথা বলেন এবং কিসের ভিত্তিতে বললেন ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এমন বিষয়টি কেন ডিজিকে অবগত করলেন। তাঁর এমনসব কর্মকান্ডে হতাশ ও বিস্মিত ট্রেনিং নিতে আসা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকগণ।

উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ মখদ্দস আলী বলেন, সহকারী প্রোগ্রামার বিভিন্ন কাজের যত বিল দিয়েছেন সবগুলো বিল দেয়া হয়েছে। এখন তিনি যদি বিল সঠিকভাবে খরচ না করেন সেটা উনার ব্যক্তিগত বিষয়।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা ইউআইটিআরসিই’র সহকারী প্রোগ্রামার প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মইনুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিভিন্ন বিল উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ভ্যাট আইটি ছাড়াও উপজেলা হিসাব শাখাকে ৫% কমিশন দিয়ে যে টাকা থাকে তা থেকে খরচ করি। অফিসিয়ালি অনেক বিষয় আছে সেটা বলা যাবে না। ইন্টারনেট সংযোগ নেই বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি যোগদান করার পূর্বে এই ট্রেনিং সেন্টারের ল্যাবে যন্ত্রপাতি নষ্ট ছিল। ল্যাব সেন্টারে স্থানীয় এজেন্সি থেকে ইন্টারনেট সংযোগ দিলেও ব্যানবেইস থেকে সার্ভারে সেন্ট্রালি কোন ইন্টারনেট সংযোগ পাইনি। প্রশিক্ষণার্থীদের সুবিধা বিবেচনা করে ওয়াইফাই রাউডার ক্রয় করে ইন্টারনেট সচল করেছি।

এ ব্যাপারে ব্যানবেইসে’র মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রাউডারের সমস্যা ছিল, সেটি সচল করে দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *